ঢাকা ১০:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫

পহেলগামে হামলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিপাকে কাশ্মীরিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:১৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩২১ বার পড়া হয়েছে

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটনের মৃত্যু হয়। এরপরেই সারা ভারত জুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো গত কয়েকদিনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরিদের হেনস্তা, মারধর এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়ার খবর সামনে এসেছে।

মূলত কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের এ ধরনের হেনস্তা ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে যারা অন্যান্য রাজ্যে পড়াশোনা করছেন। কাশ্মীরিদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে। অনেক কাশ্মীরি শিক্ষার্থী হেনস্তার ভয়ে গত কয়েকদিন ধরে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন বিষয়গুলো বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে।

একই সঙ্গে এছাড়া সামাজিক এবং গণমাধ্যমে মুসলিমবিরোধী ঘৃণাও ছড়ানো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পহেলগাম হামলার পর থেকে কাশ্মীরি এবং মুসলমান-বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি প্রবলভাবে মৌখিক আক্রমণ করা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদেরও।

পহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত সরকার। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নানা জায়গায় পাকিস্তানের পতাকাও পোড়ানো হচ্ছে।

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ২৬টি পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সামনে। এদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আবার ত্রিপুরার আগরতলাতেও পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মানুষের চলাচলের পথে পাকিস্তানের পতাকা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন এই পতাকাগুলোর ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারে।

ত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের এক ব্যক্তি নিজেকে হিন্দু নামধারী একটি সংগঠনের নেতা বলে দাবি করেছেন। এমনি একটি ছড়িয়ে পড়া সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি বলেছেন, দেরাদুনের যেখানেই কাশ্মীরিদের দেখা যাবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। এ সময় তাকে কয়েকজন কাশ্মীরি ছাত্রদের শহর ছাড়তে হুমকিও দিয়েছেন।

এ ধরনের প্রতিটা ঘটনারই খবর রাখছে বলে জানিয়েছে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির সর্বভারতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েমি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের আটক করা হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। তবে এই আটকের খবরে ছোটখাট সংগঠনগুলো সচেতন হবে কিনা জানি না।

তার ভাষ্য, কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা সারাদেশ থেকেই হেনস্তা-হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তারা একটি বিশেষ হেল্পলাইনও খুলেছেন।

অন্তত আটটি গুরুতর মারধর, হুমকি ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে, দেরাদুন, চণ্ডীগড়, প্রয়াগরাজের মতো বড় শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও সারাদেশ থেকে হেনস্তা বা হুমকির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছে আমাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা ।

তিনি আরও বলেন, পহেলগামের হামলার পর এমনিতেই সারাদেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার ওপর কাশ্মিরী শিক্ষার্থীদের হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এদিকে ঘটনাগুলো প্রকাশ না করার জন্য সরকারি চাপও আছে।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। আমার কথা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গেও। আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মুখ না খোলার নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক কথাবার্তা বাইরে না বলে। বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকার জন্যও পরামর্শ দিয়েছি।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পহেলগামে হামলার পর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিপাকে কাশ্মীরিরা

আপডেট সময় ১২:১৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটনের মৃত্যু হয়। এরপরেই সারা ভারত জুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো গত কয়েকদিনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরিদের হেনস্তা, মারধর এমনকি হত্যার হুমকি দেওয়ার খবর সামনে এসেছে।

মূলত কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের এ ধরনের হেনস্তা ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে যারা অন্যান্য রাজ্যে পড়াশোনা করছেন। কাশ্মীরিদের নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও আপত্তিকর মন্তব্য করা হচ্ছে। অনেক কাশ্মীরি শিক্ষার্থী হেনস্তার ভয়ে গত কয়েকদিন ধরে ঘরবন্দি হয়ে আছেন। কাশ্মীরি ছাত্রদের একটি সর্বভারতীয় সংগঠন বিষয়গুলো বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছে।

একই সঙ্গে এছাড়া সামাজিক এবং গণমাধ্যমে মুসলিমবিরোধী ঘৃণাও ছড়ানো হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পহেলগাম হামলার পর থেকে কাশ্মীরি এবং মুসলমান-বিদ্বেষ ছড়ানোর পাশাপাশি প্রবলভাবে মৌখিক আক্রমণ করা হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদেরও।

পহেলগামের হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছে ভারত সরকার। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নানা জায়গায় পাকিস্তানের পতাকাও পোড়ানো হচ্ছে।

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ২৬টি পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সামনে। এদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আবার ত্রিপুরার আগরতলাতেও পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মানুষের চলাচলের পথে পাকিস্তানের পতাকা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেন এই পতাকাগুলোর ওপর দিয়ে মানুষ হাঁটতে পারে।

ত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের এক ব্যক্তি নিজেকে হিন্দু নামধারী একটি সংগঠনের নেতা বলে দাবি করেছেন। এমনি একটি ছড়িয়ে পড়া সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি বলেছেন, দেরাদুনের যেখানেই কাশ্মীরিদের দেখা যাবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। এ সময় তাকে কয়েকজন কাশ্মীরি ছাত্রদের শহর ছাড়তে হুমকিও দিয়েছেন।

এ ধরনের প্রতিটা ঘটনারই খবর রাখছে বলে জানিয়েছে জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

সংগঠনটির সর্বভারতীয় আহ্বায়ক নাসির খুয়েমি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের আটক করা হয়েছে বলে সেখানকার পুলিশ আমাকে জানিয়েছে। তবে এই আটকের খবরে ছোটখাট সংগঠনগুলো সচেতন হবে কিনা জানি না।

তার ভাষ্য, কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা সারাদেশ থেকেই হেনস্তা-হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তারা একটি বিশেষ হেল্পলাইনও খুলেছেন।

অন্তত আটটি গুরুতর মারধর, হুমকি ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে, দেরাদুন, চণ্ডীগড়, প্রয়াগরাজের মতো বড় শহরসহ বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও সারাদেশ থেকে হেনস্তা বা হুমকির শিকার হওয়ার কথা জানাচ্ছে আমাদের রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা ।

তিনি আরও বলেন, পহেলগামের হামলার পর এমনিতেই সারাদেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তার ওপর কাশ্মিরী শিক্ষার্থীদের হয়রানির ঘটনা প্রকাশ পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এদিকে ঘটনাগুলো প্রকাশ না করার জন্য সরকারি চাপও আছে।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশকের সঙ্গে আমি নিজে কথা বলেছি। আমার কথা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গেও। আর আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মুখ না খোলার নির্দেশনা দিয়েছি। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক কথাবার্তা বাইরে না বলে। বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকার জন্যও পরামর্শ দিয়েছি।