নির্বাচন ছাড়াই ২০৩০ পর্যন্ত মালির ক্ষমতায় সামরিক প্রধান গোইতা

- আপডেট সময় ০৫:৪১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
মালির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক বড় ধরনের পটপরিবর্তন ঘটতে চলেছে। ২০২২ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিলেও, দেশটির সামরিক প্রধান গেন আসসিমি গোইতা নির্বাচন ছাড়াই ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই খবর নিশ্চিত করেছে।
৪১ বছর বয়সী গোইতা এ পর্যন্ত দুবার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মালির ক্ষমতা দখল করেছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে পরের বছর দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে সেই ‘পরের বছর’ আর আসেনি। তখন থেকেই তিনি দেশটির অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সম্প্রতি মালির নির্বাচন এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে একটি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে দেশটির অস্থায়ী সরকার।
এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয় যে, গেন আসসিমি গোইতাকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রাখা হোক।
তবে, এই সম্মেলনে দেশটির প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি, যা এই সিদ্ধান্তের সর্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
যদিও গেন আসসিমি গোইতা রাজনৈতিক দলগুলোর এই সমর্থনের বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি, বিশ্লেষকদের ধারণা, নিজের ক্ষমতাকে আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্যই তিনি এই সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন।
গোইতার এই পদক্ষেপের ফলে পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
মালির বিরোধীদলীয় নেতা মোহামেদ সালিয়া তৌরে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বহুদলীয় রাজনীতিকে দমানোর চেষ্টাকে একটি ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই সম্মেলনের সুপারিশকে ‘মালির সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করার প্রস্তাব’ হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
সংস্থাটির সাহেল অঞ্চলের গবেষক উসমান দিয়ালো এই প্রস্তাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এটি মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।
তবে, সম্মেলনের সুপারিশ নিয়ে এখনও কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো কি সত্যিই দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে, নাকি কেবল নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে ব্যর্থ দলগুলোকে বাতিল করার কথা বলা হয়েছে, তা সম্মেলনের বিবৃতিতে স্পষ্ট নয়।
বর্তমানে মালির ক্ষমতাসীন সামরিক সরকার ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতা দমনে ব্যস্ত।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গোইতা প্রতিবেশী দেশ বুরকিনা ফাসো ও নাইজারের সামরিক শাসকদের সঙ্গে একটি জোট তৈরি করেছেন।
এই তিনটি দেশ এখন ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার এই পদক্ষেপ মালির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখন দেখার বিষয়।