ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ

- আপডেট সময় ১২:৩৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে স্থায়ীভাবে বরখাস্তের দাবিতে আবারও বিক্ষোভ করেছেন। ওই শিক্ষকের উপস্থিতি সন্দেহে ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনে তালা দেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
শিক্ষার্থীরা শুক্রবার (১৬ মে) বিকেল তিনটা থেকে এ বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনের দুই গেট অবরোধ করে বিষয়টির স্থায়ী সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনস্থল ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা দেন।
এর আগে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনের সকাল ১০টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই শিক্ষকের অভিযোগ ও শাস্তি পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ময়মনসিংহ রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. আশরাফুর রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভা হয়।
পরে জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা থাকলেও শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করেন। এ সময় ওই ভবনের একটি কক্ষে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজের অবস্থান সন্দেহে শিক্ষার্থীরা ভবনের দুই পাশের গেটে তালা দেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, এর আগে তদন্ত কমিটির কাছে ভুক্তভোগীরা জবানবন্দি দিয়েছেন। তদন্তে শিক্ষক হাফিজের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এর পরেও তাকে স্থায়ী বহিষ্কার না করে আবারও তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। আমাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা মতবিনিময় সভা করেছে এই তদন্ত কমিটি। কিন্তু তাদের কথায় আমাদের মনে হয়েছে এই কমিটি বায়াসড। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। পূর্বের তদন্ত কমিটির কাছে এরই মধ্যে আমরা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ উত্থাপন করেছি, সেগুলোর ভিত্তিতে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় হাফিজের ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তারা চাইলে তদন্ত কমিটি থেকে তথ্য নিতে পারেন। পূর্বের তদন্তে যেহেতু অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সেই ভিত্তিতে হাফিজকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে হবে।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বোরহান কবির বলেন, সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে কিন্তু তাকে লঘু শাস্তি দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান বলেন, যেহেতু বিষয়টি সাব-জুডিস অবস্থায় আছে সেহেতু কোনো মন্তব্য করব না।
এর আগে শিক্ষক হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধেরে গত ৭ অক্টোবর বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে ২৭ দফা অভিযোগ ও মৌখিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়।
তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান। দাবি আদায়ে গত ২৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন শাস্তি পর্যালোচনার আশ্বাস দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।