ঢাকা ০৪:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫

চট্টগ্রাম কারাগারে জঙ্গিদের সেলে আওয়ামী লীগ নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১০:০৬:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ২৭২ বার পড়া হয়েছে

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সবচেয়ে পুরোনো এবং কুখ্যাত স্থান ছিল এই ‘১০ সেল’। এখানে রাখা হতো সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের।

কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই সেলের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন এখানে স্থান হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলরসহ শীর্ষ নেতাদের। ৩৬ বর্গফুট আয়তনের একেকটি সেলে রাখা হচ্ছে দু’জনকে।

বর্তমানে এই ‘১০ সেল’-এ রয়েছেন চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম লতিফ, চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি রহিমুল্লাহ, ফটিকছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ-সহ অন্তত ১২ জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এর আগেও এই সেলে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, নোয়াখালীর সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী এবং হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। অন্য মামলায় ঢাকা, নোয়াখালী বা কক্সবাজারে থাকলেও, চট্টগ্রামে এলে তাদের এই ‘১০ সেলে’ই রাখা হয়।

কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারার মামলায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে আদালতে পাঠাচ্ছেন আদালত।

যেসব আসামির নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তাদেরকেই এই ‘১০ সেলে’ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে এখানে অন্তত তিনজন সাবেক এমপি রয়েছেন। সেলটি সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং কারারক্ষীরা বন্দিদের ওপর কড়া নজর রাখেন।

একসময় এই ‘১০ সেলে’ যুবলীগের সন্ত্রাসী দীপক দত্ত ভোলা, শামীম উদ্দিন, নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির, বিধান বড়ুয়া এবং জঙ্গি কার্যক্রমে ২৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবালের মতো ব্যক্তিরা বন্দিজীবন কাটিয়েছেন।

জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেছেন, আগে এখানে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ভয়ংকর আসামি ছিলেন, যাদেরকে এখন ‘৬৪ সেলে’ স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর আসামিদেরই১০ সেলেরাখা হচ্ছে।

‘১০ সেল’ ভবনটি সাধারণ বন্দি ওয়ার্ড ভবন থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। সাধারণ বন্দিরা এই ‘১০’ ও ‘৬৪ সেলের’ আশপাশে হাঁটাচলা করতে পারেন না।

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে সেলগুলোতে প্রায় ১০ গুণ বেশি বন্দি থাকায় আগে ‘১০ সেল’ ও ‘৬৪ সেল’ থেকে বান্দরবানের ১০৩ কেএনএফ সন্ত্রাসীকে বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম কারাগারে জঙ্গিদের সেলে আওয়ামী লীগ নেতারা

আপডেট সময় ১০:০৬:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সবচেয়ে পুরোনো এবং কুখ্যাত স্থান ছিল এই ‘১০ সেল’। এখানে রাখা হতো সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের।

কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই সেলের চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন এখানে স্থান হয়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলরসহ শীর্ষ নেতাদের। ৩৬ বর্গফুট আয়তনের একেকটি সেলে রাখা হচ্ছে দু’জনকে।

বর্তমানে এই ‘১০ সেল’-এ রয়েছেন চট্টগ্রাম-১০ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম লতিফ, চট্টগ্রাম-১৬ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি রহিমুল্লাহ, ফটিকছড়ি পৌরসভার সাবেক মেয়র মুহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, সাবেক কাউন্সিলর জহিরুল আলম জসিম, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ-সহ অন্তত ১২ জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এর আগেও এই সেলে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন রাউজানের সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী, টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, নোয়াখালীর সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী এবং হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী। অন্য মামলায় ঢাকা, নোয়াখালী বা কক্সবাজারে থাকলেও, চট্টগ্রামে এলে তাদের এই ‘১০ সেলে’ই রাখা হয়।

কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারার মামলায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে আদালতে পাঠাচ্ছেন আদালত।

যেসব আসামির নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তাদেরকেই এই ‘১০ সেলে’ রাখা হচ্ছে। বর্তমানে এখানে অন্তত তিনজন সাবেক এমপি রয়েছেন। সেলটি সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং কারারক্ষীরা বন্দিদের ওপর কড়া নজর রাখেন।

একসময় এই ‘১০ সেলে’ যুবলীগের সন্ত্রাসী দীপক দত্ত ভোলা, শামীম উদ্দিন, নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির, বিধান বড়ুয়া এবং জঙ্গি কার্যক্রমে ২৪৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী জাবেদ ইকবালের মতো ব্যক্তিরা বন্দিজীবন কাটিয়েছেন।

জেলার মাসুদ হাসান জুয়েল বলেছেন, আগে এখানে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি ও ভয়ংকর আসামি ছিলেন, যাদেরকে এখন ‘৬৪ সেলে’ স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে রাজনৈতিক স্পর্শকাতর আসামিদেরই১০ সেলেরাখা হচ্ছে।

‘১০ সেল’ ভবনটি সাধারণ বন্দি ওয়ার্ড ভবন থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত। সাধারণ বন্দিরা এই ‘১০’ ও ‘৬৪ সেলের’ আশপাশে হাঁটাচলা করতে পারেন না।

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে সেলগুলোতে প্রায় ১০ গুণ বেশি বন্দি থাকায় আগে ‘১০ সেল’ ও ‘৬৪ সেল’ থেকে বান্দরবানের ১০৩ কেএনএফ সন্ত্রাসীকে বিশেষ ওয়ার্ড তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছিল।