০১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি: হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৩৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন। আদালত আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছে।

শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন – জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান এবং তদন্তে বেরিয়ে আসা আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া আদালতে আরও দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় ১৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসৎ উদ্দেশ্যে হলফনামায় তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। যেখানে তাদের ঢাকা শহরে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার মায়ের কাছে আবদার করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই অবৈধভাবে প্রভাবিত করে প্লট বরাদ্দ পান। পরবর্তীতে তিনি বরাদ্দকৃত প্লটটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে ভোগদখলে রেখেছেন।

প্রকল্পের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অপর ১৬ জন আসামি অবৈধভাবে প্রভাবিত হয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের এবং অন্যদের লাভবান করার উদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন, যদিও তারা আইন অনুযায়ী এই বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন।

তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন এবং প্রকল্পের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন।

আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং আইনসম্মত পারিশ্রমিক ছাড়াই, আইন অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে লাভবান হয়ে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্লটটি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে ভোগদখলে রেখেছেন। এর মাধ্যমে আসামিরা প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া-নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পূর্বাচলে প্লট দুর্নীতি: হাসিনা-পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আপডেট সময় ১২:৩৮:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার প্লট জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আসামিদের বিরুদ্ধে এই পরোয়ানা জারি করেন। আদালত আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে গ্রেফতার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেছে।

শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে তারা হলেন – জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান এবং তদন্তে বেরিয়ে আসা আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে এই মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আফনান জান্নাত কেয়া আদালতে আরও দুই আসামিসহ মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় ১৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসৎ উদ্দেশ্যে হলফনামায় তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। যেখানে তাদের ঢাকা শহরে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা এবং আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তার মায়ের কাছে আবদার করে রাজউকে কোনো আবেদন না করেই অবৈধভাবে প্রভাবিত করে প্লট বরাদ্দ পান। পরবর্তীতে তিনি বরাদ্দকৃত প্লটটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে ভোগদখলে রেখেছেন।

প্রকল্পের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অপর ১৬ জন আসামি অবৈধভাবে প্রভাবিত হয়ে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরস্পর যোগসাজশে নিজেদের এবং অন্যদের লাভবান করার উদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন, যদিও তারা আইন অনুযায়ী এই বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন না।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকা সত্ত্বেও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তা গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন।

তিনি সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন এবং প্রকল্পের বরাদ্দ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করেছেন।

আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং আইনসম্মত পারিশ্রমিক ছাড়াই, আইন অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও পরস্পর যোগসাজশে লাভবান হয়ে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্লটটি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে ভোগদখলে রেখেছেন। এর মাধ্যমে আসামিরা প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক দেওয়া-নেওয়া এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ ও বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।