০১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে নিয়ে ছড়া , বিপদে ওয়াসার কর্তা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:২৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা, শহিদুল ইসলাম, একটি ছড়া লিখে কঠিন শাস্তির মুখে পড়েছেন। তিনি ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব ছিলেন। গত মঙ্গলবার তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) অফিসে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম তার নিজের লেখা একটি ছড়া তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছিলেন। ছড়াটির বিষয় ছিল রাজধানীর ঈদ শোভাযাত্রার সেই নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে মুখ করে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। হোজ্জারূপী সেই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছিল।

শহিদুল ইসলাম একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘লেখালেখি আমার পুরনো অভ্যাস। আমি মাঝেমধ্যে ফেসবুকেও কিছু লিখি। ঈদের পরে একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমি লিখেছি কিনা? আমি হ্যাঁ বললে, তিনি জানতে চান কেন লিখেছি। আমি স্যারকে বলি, এটা আমার অভ্যাস, তাই মাঝেমধ্যে একটু আধটু লিখি। ছড়াটি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে লিখিনি।’

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এরপর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে। সেখানে কী লেখা যাবে আর কী লেখা যাবে না, তা বলা আছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখিনি। ছড়াতে কী ভুল হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’

শহিদুল ইসলাম জানান, ‘বিকেলে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে একটি অফিস আদেশ দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’

ছড়া লেখার জন্য একজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হলে বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করেও অনেকে সাহিত্যচর্চা করেন। আগে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সরকারের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের একটি সাধারণ মজার ছড়াকে কেন্দ্র করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান একটি পত্রিকাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীরা কী লিখতে পারবেন আর কী পারবেন না, সে বিষয়ে কিছু নিয়ম আছে। তার লেখা ছড়াতে সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসার সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী জানায়।

ছড়াটিতে যা লেখা ছিল:

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

পেয়ো নাকো লজ্জা

ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো

রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো

গাঁধা নাকি ঘোড়া সে

কি করে কে বলে যে

গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ

তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক

কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী

কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী

ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে

কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে

বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে

ঢাক ঢোলের তালে তালে

গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো

আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?

যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।

শহিদুল ইসলামের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কথা বলার স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতার জন্য। বাংলাদেশে যখন যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। আমার মনে হয় না এই ছড়াটিতে সরকারের কোনো সমালোচনা করা হয়েছে। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা জামায়াতের কোনো নেতার ছবি মনে হতে পারে।’

একসময় আবু করিম নামে একজন কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আবু করিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন।

মোহন রায়হান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুল ইসলামের এই ছড়াতে এমন কিছু আছে যার জন্য তার চাকরির জীবনে কোনো শাস্তি হওয়া উচিত। বরং শাস্তি দিলে তার লেখার আগ্রহ কমে যাবে।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে নিয়ে ছড়া , বিপদে ওয়াসার কর্তা

আপডেট সময় ০৫:২৩:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা ওয়াসার একজন কর্মকর্তা, শহিদুল ইসলাম, একটি ছড়া লিখে কঠিন শাস্তির মুখে পড়েছেন। তিনি ওয়াসার কমন সার্ভিস বিভাগের উপসচিব ছিলেন। গত মঙ্গলবার তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে এবং উপব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (প্রশাসন) অফিসে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম তার নিজের লেখা একটি ছড়া তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছিলেন। ছড়াটির বিষয় ছিল রাজধানীর ঈদ শোভাযাত্রার সেই নাসিরুদ্দিন হোজ্জা, যিনি গাধার পিঠে উল্টো দিকে মুখ করে বসেছিলেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। হোজ্জারূপী সেই চরিত্রটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছিল।

শহিদুল ইসলাম একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘লেখালেখি আমার পুরনো অভ্যাস। আমি মাঝেমধ্যে ফেসবুকেও কিছু লিখি। ঈদের পরে একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে দিয়েছিলাম। হঠাৎ মঙ্গলবার ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমাকে তার অফিসে ডেকে পাঠান। সেখানে গিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ছড়াটি আমি লিখেছি কিনা? আমি হ্যাঁ বললে, তিনি জানতে চান কেন লিখেছি। আমি স্যারকে বলি, এটা আমার অভ্যাস, তাই মাঝেমধ্যে একটু আধটু লিখি। ছড়াটি কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে লিখিনি।’

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এরপর এমডি স্যার বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কিছু নিয়ম আছে। সেখানে কী লেখা যাবে আর কী লেখা যাবে না, তা বলা আছে। আমি বলি, স্যার, আমি তো কাউকে উদ্দেশ্য করে লিখিনি। ছড়াতে কী ভুল হয়েছে, তাও বুঝতে পারছি না।’

শহিদুল ইসলাম জানান, ‘বিকেলে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে একটি অফিস আদেশ দেওয়া হয়। সেখানে দেখি, আমাকে ওএসডি করা হয়েছে।’

ছড়া লেখার জন্য একজন কর্মকর্তাকে ওএসডি করার খবরে ঢাকা ওয়াসায় নানা আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হলে বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসে। কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি চাকরি করেও অনেকে সাহিত্যচর্চা করেন। আগে অনেক কবি-সাহিত্যিক সরকারি চাকরিজীবী হয়েও সরকারের সমালোচনা করে কবিতা, গল্প ও গান লিখেছেন। কিন্তু শহিদুল ইসলামের একটি সাধারণ মজার ছড়াকে কেন্দ্র করে এমন শাস্তি দেওয়া ঠিক হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুর রহমান একটি পত্রিকাকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীরা কী লিখতে পারবেন আর কী পারবেন না, সে বিষয়ে কিছু নিয়ম আছে। তার লেখা ছড়াতে সেই নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। ওয়াসার সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেখা যাক, কমিটি কী জানায়।

ছড়াটিতে যা লেখা ছিল:

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

পেয়ো নাকো লজ্জা

ঘোড়ায় চড়িয়া তুমি হাঁটিয়া চলো

রসিকতায় শত কথা সত্যি বলো

গাঁধা নাকি ঘোড়া সে

কি করে কে বলে যে

গাঁধা হাঁটে চার পায়ে টগবগ

তোমার মত নয় সে অযথাই বকবক

কেউ বলে তুর্কি কেউ বলে ইরানী

কখনও কি স্বাদ পেলে সুলতানী বিরানী

ঈদ এলে হেঁটেছ কি মুঘলের ঢাকাতে

কাণ্ড কি ঘটিয়েছ অযথাই হাসাতে

বহুকাল বাদে আজ তুমি দেখা দিলে

ঢাক ঢোলের তালে তালে

গাঁধার পশ্চাতে মুখ করে চলিলে উল্টো

আজব এক ঈদ গেলো ঘটনাটি ভুল তো?

যাই হোক জানি কম নাসিরুদ্দিন হোজ্জা

এতে তুমি পেয়ো না গো এতটুকু লজ্জা।

শহিদুল ইসলামের ছড়াটি পড়ার পর কবি মোহন রায়হান একটি পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কথা বলার স্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতার জন্য। বাংলাদেশে যখন যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেনি। আমার মনে হয় না এই ছড়াটিতে সরকারের কোনো সমালোচনা করা হয়েছে। বরং গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জাকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তা জামায়াতের কোনো নেতার ছবি মনে হতে পারে।’

একসময় আবু করিম নামে একজন কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন। পরে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পিএস হয়েছিলেন। যদিও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আবু করিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন।

মোহন রায়হান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি না শহিদুল ইসলামের এই ছড়াতে এমন কিছু আছে যার জন্য তার চাকরির জীবনে কোনো শাস্তি হওয়া উচিত। বরং শাস্তি দিলে তার লেখার আগ্রহ কমে যাবে।’