১২:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

লবণের দামে রেকর্ড পতন: উৎপাদন খরচ ৮ টাকা, বিক্রি মাত্র ৩ টাকায়

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

কক্সবাজার, ১২ এপ্রিল ২০২৫: দেশীয় লবণ শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিক, সিন্ডিকেট এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে লবণের দাম রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৭ থেকে ৮ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৩.৫ টাকায়।

এতে চাষিরা তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার আশা হারাচ্ছেন। জমি ভাড়া, পলিথিন ক্রয়, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করে লবণ উৎপাদন করলেও চাষিরা এখন লোকসানের মুখে।

অনেকে বাধ্য হয়ে কম দামে লবণ বিক্রি করছেন, আবার কেউ কেউ দাম পতনের কারণে উৎপাদিত লবণ মাঠের গর্তে বা গুদামে মজুদ করে রাখছেন। গত ১৭ বছরে এমন সংকট লবণ চাষিরা আর দেখেননি।

সরেজমিনে জানা গেছে, কক্সবাজারের সাতটি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত মৌসুমের লবণ এখনও গুদামে ও মাঠে পড়ে আছে। এই মজুদ দিয়ে আরও কয়েক মাস চলতে পারে। তবু চলতি মৌসুমে মাঠে মাঠে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে, যা আগামী মে মাস পর্যন্ত চলবে। বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কক্সবাজারে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়, যা গত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।

গত বছর প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু মৌসুমের শেষে তা নেমে যায় ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। চলতি মৌসুমে দাম আরও কমে কেজিতে ৩ টাকায় ঠেকেছে। অথচ, প্যাকেটজাত লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এই বিশাল দামের পার্থক্যে মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের পকেট ভারী হলেও চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ করে দিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৎপর। ঘূর্ণিঝড় রেমালের অজুহাতে সরকার এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে, যা স্থানীয় শিল্পের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন চাষিরা। কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাম্প্রতিক এক সভায় এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

চাষিরা বলছেন, “এভাবে চললে লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ চাই।” তারা আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও দাম স্থিতিশীল করার দাবি জানিয়েছেন। বিসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লবণ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ না হলে চাষিরা আরও বড় সংকটের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

লবণের দামে রেকর্ড পতন: উৎপাদন খরচ ৮ টাকা, বিক্রি মাত্র ৩ টাকায়

আপডেট সময় ১০:০৫:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

কক্সবাজার, ১২ এপ্রিল ২০২৫: দেশীয় লবণ শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে। মধ্যস্বত্বভোগী মিল মালিক, সিন্ডিকেট এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে লবণের দাম রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৭ থেকে ৮ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩ থেকে ৩.৫ টাকায়।

এতে চাষিরা তাদের বিনিয়োগ ফেরত পাওয়ার আশা হারাচ্ছেন। জমি ভাড়া, পলিথিন ক্রয়, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করে লবণ উৎপাদন করলেও চাষিরা এখন লোকসানের মুখে।

অনেকে বাধ্য হয়ে কম দামে লবণ বিক্রি করছেন, আবার কেউ কেউ দাম পতনের কারণে উৎপাদিত লবণ মাঠের গর্তে বা গুদামে মজুদ করে রাখছেন। গত ১৭ বছরে এমন সংকট লবণ চাষিরা আর দেখেননি।

সরেজমিনে জানা গেছে, কক্সবাজারের সাতটি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গত মৌসুমের লবণ এখনও গুদামে ও মাঠে পড়ে আছে। এই মজুদ দিয়ে আরও কয়েক মাস চলতে পারে। তবু চলতি মৌসুমে মাঠে মাঠে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে, যা আগামী মে মাস পর্যন্ত চলবে। বিসিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কক্সবাজারে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়, যা গত ৬৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে উৎপাদন ছিল ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন।

গত বছর প্রতি মণ লবণের দাম ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। কিন্তু মৌসুমের শেষে তা নেমে যায় ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। চলতি মৌসুমে দাম আরও কমে কেজিতে ৩ টাকায় ঠেকেছে। অথচ, প্যাকেটজাত লবণ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। এই বিশাল দামের পার্থক্যে মধ্যস্বত্বভোগী ও দালালদের পকেট ভারী হলেও চাষিরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

চাষিরা অভিযোগ করছেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানির সুযোগ করে দিতে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৎপর। ঘূর্ণিঝড় রেমালের অজুহাতে সরকার এক লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে, যা স্থানীয় শিল্পের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন চাষিরা। কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সাম্প্রতিক এক সভায় এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

চাষিরা বলছেন, “এভাবে চললে লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ চাই।” তারা আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও দাম স্থিতিশীল করার দাবি জানিয়েছেন। বিসিকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

লবণ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ না হলে চাষিরা আরও বড় সংকটের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।