সাঁথিয়ায় দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরালেন ইউপি সদস্য

- আপডেট সময় ০৩:২৬:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে
চুরির অপবাদে সালিশ বৈঠকের রায়ে পাবনার সাঁথিয়ায় দুই ভাইকে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে পুরো গ্রাম। করমজা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতেবুধবার (২৩ এপ্রিল) উপজেলার সালিশ বৈঠকে এ রায় দেওয়া হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। এরপর লজ্জা-অপমানে অভিযুক্ত দুই ভাই এলাকা ছেড়েছেন।
এদিকে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, আইনের আশ্রয় না নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অন্যরা এভাবে কাউকে শাস্তি দিতে পারেন কি না?
অভিযুক্তরা হলেন, উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল মণ্ডলের ছেলে বাবু মণ্ডল (২৭) এবং তার আপন ছোট ভাই হোসেন মণ্ডল (২৪)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আফড়া ভাদালিয়াপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে রহম আলীর বাড়িতে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে সিঁদ কেটে চুরির চেষ্টার ঘটনা ঘটে।
গত বুধবার সকাল আটটার দিকে এ ঘটনায় অভিযুক্তদের জড়িত থাকার সন্দেহে ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসানো হয়। সেখানে চুরির বিষয়টি প্রমাণ হয়নি। তারপরও গ্রাম্য প্রধানদের রায়ে তাদের জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘোরানো হয়। পরে মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি ভাইরাল হলে এ নিয়ে শুরু হয় নানা সমালোচনা।
ভুক্তভোগীরা গ্রামছাড়া থাকায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাদের বাবা আব্দুল মণ্ডল বলেন, আমার ছেলেরা এ ঘটনায় জড়িত নয়। শত্রুতাবশত মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ইউপি সদস্য লোকামান সরদারের উপস্থিতিতে গ্রাম প্রধানরা চুরির কথা স্বীকার করিয়েছেন। পরে জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছেন। ছেলেদের লজ্জায় আমি নিজেও বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। আমি মাতব্বরদের বিচার চাই।
অভিযুক্ত বাবু মণ্ডলের স্ত্রী কুলসুম খাতুন এবং হোসেন মণ্ডলের স্ত্রী পারভিন খাতুন বলেন, আমাদের স্বামীরা এ ঘটনায় জড়িত নয়। তারা প্রধানদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তারপরও তাদের জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো হয়েছে। লজ্জায় মুখ দেখাতে না পেরে তারা গ্রামছাড়া হয়েছেন। আমরাও লজ্জায় ঠিকভাবে চলতে পারছি না। এই মিথ্যা অপবাদ এবং গ্রাম্য প্রধানদের শাস্তি ও বিচার চাই।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য লোকমান সরদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্তরা আপন ভাই। তারা ওই রাতে সিঁদ কেটে চুরি করতে ঢুকেছিল। সেসময় হাতেনাতে কেউ না ধরলেও ওই যুবকরাই জড়িত বলে বিভিন্নভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় আমার বাড়িতে সালিশ বসেছিল এবং প্রধান হিসেবে আমি উপস্থিত থেকে স্বাক্ষর করেছিলাম। কিন্তু পরে জরুরি কাজের জন্য আমি বাইরে চলে গিয়েছিলাম। সালিশের রায়ের সময় আমি ছিলাম না। এ রায় এবং জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানোর বিষয়ে কিছু জানি না।
তবে ইউপি সদস্য সালিশে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করলেও স্থানীয়দের মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওতে অভিযুক্তদের জুতার মালা পরানোর সময় ইউপি সদস্যকে দেখা যায়।
সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, কোনো অভিযোগ না পেলেও ঘটনা তদন্তে আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। গ্রাম প্রধানরা এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। জুতার মালা পরিয়ে অভিযুক্তদের গ্রামে ঘোরানো উচিত হয়নি।