ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
৬০০ স্থানে পাওয়া যাবে

সৌদি আরবে মদ বিক্রির অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৬:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

একসময় যেখানে অ্যালকোহল ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেই সৌদি আরব এখন তাদের কঠোর নীতি থেকে সরে আসছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০টি পর্যটন স্থানে মদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি! এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এবং এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও পর্যটন লক্ষ্য।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০৩০ সালের এক্সপোসহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আর এই বিশাল ইভেন্টগুলোর আগে বিদেশি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতেই এই নাটকীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অতি-রক্ষণশীল’ দেশটি পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রবাসী-বান্ধব কম্পাউন্ডসহ লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানে ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার বিক্রির অনুমতি দেবে। তবে জনসাধারণের স্থান, বাড়ি, দোকান এবং ফ্যান জোনে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে এই নীতিগত পরিবর্তনকে দেখা হচ্ছে। এই ভিশনের মূল লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং সৌদি আরবের ‘টিটোটাল’ ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলা।

কর্মকর্তারা আশা করছেন, নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্পের মতো জমকালো এলাকায় নিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল বিক্রি সৌদি আরবকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেবে। কারণ, এই দেশগুলোতে পর্যটন অঞ্চলে মদ্যপান ইতোমধ্যেই বৈধ।

‘দ্য সান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানগুলো কঠোরভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার’ অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অপব্যবহার রোধ ও দেশের ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর নিয়ম থাকবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো সাংস্কৃতিক পরিচয় না হারিয়ে বিশ্বকে স্বাগত জানানো। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে সৌদি আরবকে একটি প্রগতিশীল, অথচ সম্মানজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া।

এই পরিকল্পনাটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে – যা ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আট বছর আগে। দেশের ভাবমূর্তি আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। এই ঘোষণায় ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।

এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ এলবিসি রেডিওকে বলেছিলেন, “এখানে কোনো অ্যালকোহল নেই, বরং আমাদের আবহাওয়ার মতো, এটি একটি শুষ্ক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থাকা মানুষকে আপন করে নিতে পেরে খুশি, কিন্তু আমরা অন্য কারও জন্য আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই না।”

সৌদি আরব জোর দিয়ে বলছে, কেউ যদি আইনের অপব্যবহার করে ধরা পড়ে, তবে তাকে দ্রুত পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

৬০০ স্থানে পাওয়া যাবে

সৌদি আরবে মদ বিক্রির অনুমতি

আপডেট সময় ০৬:১৭:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

একসময় যেখানে অ্যালকোহল ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেই সৌদি আরব এখন তাদের কঠোর নীতি থেকে সরে আসছে। ২০২৬ সালের মধ্যে ৬০০টি পর্যটন স্থানে মদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি! এই ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এবং এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক ও পর্যটন লক্ষ্য।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সৌদি আরব ২০৩৪ সালের ফিফা বিশ্বকাপ এবং ২০৩০ সালের এক্সপোসহ বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আর এই বিশাল ইভেন্টগুলোর আগে বিদেশি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতেই এই নাটকীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অতি-রক্ষণশীল’ দেশটি পাঁচ তারকা হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং প্রবাসী-বান্ধব কম্পাউন্ডসহ লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানে ওয়াইন, বিয়ার এবং সাইডার বিক্রির অনুমতি দেবে। তবে জনসাধারণের স্থান, বাড়ি, দোকান এবং ফ্যান জোনে মদ্যপান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে।

ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন ২০৩০’-এর অংশ হিসেবে এই নীতিগত পরিবর্তনকে দেখা হচ্ছে। এই ভিশনের মূল লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক পর্যটন বৃদ্ধি করা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং সৌদি আরবের ‘টিটোটাল’ ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলা।

কর্মকর্তারা আশা করছেন, নিওম, সিন্দালাহ দ্বীপ এবং লোহিত সাগর প্রকল্পের মতো জমকালো এলাকায় নিয়ন্ত্রিত অ্যালকোহল বিক্রি সৌদি আরবকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের মতো উপসাগরীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুবিধা দেবে। কারণ, এই দেশগুলোতে পর্যটন অঞ্চলে মদ্যপান ইতোমধ্যেই বৈধ।

‘দ্য সান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্থানগুলো কঠোরভাবে ‘নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার’ অধীনে পরিচালিত হবে। প্রশিক্ষিত কর্মী এবং অপব্যবহার রোধ ও দেশের ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য কঠোর নিয়ম থাকবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হলো সাংস্কৃতিক পরিচয় না হারিয়ে বিশ্বকে স্বাগত জানানো। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে সৌদি আরবকে একটি প্রগতিশীল, অথচ সম্মানজনক খেলোয়াড় হিসেবে স্থান দেওয়া।

এই পরিকল্পনাটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে – যা ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আট বছর আগে। দেশের ভাবমূর্তি আধুনিকীকরণের ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঘোষণা করেছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে মদ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। এই ঘোষণায় ইংল্যান্ডের ফুটবল ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল।

এমনকি গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদির উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন বন্দর আল সৌদ এলবিসি রেডিওকে বলেছিলেন, “এখানে কোনো অ্যালকোহল নেই, বরং আমাদের আবহাওয়ার মতো, এটি একটি শুষ্ক দেশ। প্রত্যেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমরা আমাদের সংস্কৃতির সীমানার মধ্যে থাকা মানুষকে আপন করে নিতে পেরে খুশি, কিন্তু আমরা অন্য কারও জন্য আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চাই না।”

সৌদি আরব জোর দিয়ে বলছে, কেউ যদি আইনের অপব্যবহার করে ধরা পড়ে, তবে তাকে দ্রুত পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।