ঢাকা ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

মিষ্টির নাম ছিলো মাইসোর পাক বদলে রাখা হলো মাইসোর শ্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৩:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় দুই দেশের নাগরিকরাই এ নিয়ে কতটা প্রভাবিত এবং উত্তেজিত ছিলেন সেটা আগেই দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই সংঘাত নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য, মিমও তৈরি হয়েছে। এর আগে দক্ষিণ ভারতের শহর হায়দরাবাদভিত্তিক করাচি বেকারি নামের একটি বিখ্যাত বেকারি প্রতিষ্ঠানের নামে কেন পাকিস্তানের শহর করাচি রয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে দোকানে ভাঙচুর চালায় একদল হিন্দুত্ববাদী।

এখন বিতর্ক বেঁধেছে একটি জনপ্রিয় মিষ্টির নাম নিয়ে। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত মাইসোর পাক নামের মিষ্টিতে পাক শব্দটা আছে বলে ওই মিষ্টিটার নামই বদলে দিয়েছে রাজস্থানের জয়পুরের একটি মিষ্টির দোকান। ওই মিষ্টির নতুন নাম তারা দিয়েছে মাইসোর শ্রী।

সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ তো আবার বলছেন মাইসোর পাক-এর নাম বদলে মাইসোর ভারত রাখা উচিত ছিল।

আবার আরেকটি মিষ্টি, যার নাম মোতি পাক সেটারও নাম বদলে মোতি শ্রী রাখা হয়েছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। পাক শব্দটি আছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কারণ পাকিস্তানকে অনেক সময় সংক্ষেপে পাক বলা হয়ে থাকে। তবে জানা গেছে যে, এই দুই মিষ্টির সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্কই নেই। এগুলো ভারতেরই মিষ্টি।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রাজস্থানের জয়পুরের অন্তত তিনটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান তাদের মিষ্টির নাম বদলেছে। এই সবগুলো মিষ্টির নামেই পাক শব্দটা ছিল। আম পাক-এর নাম রাখা হয়েছে আম শ্রী, গোন্ড পাক হয়েছে গোন্ড শ্রী, স্বর্ণ ভস্ম পাক এর নতুন নাম স্বর্ণ শ্রী এবং চণ্ডী ভস্ম পাক- এর নাম বদলে হয়েছে চণ্ডী শ্রী।

জয়পুরের বৈশালী নগর এলাকার নামকরা মিষ্টির দোকান তেওহার সুইটস্ এর মালিক অঞ্জলি জৈনকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, মিষ্টির নামে যাতে জাতীয় অহং বোধ প্রতিফলিত হয়, সেজন্যই মিষ্টির নাম বদলে ফেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশাত্মবোধের ভাবনা শুধু সীমান্তে থাকবে কেন, প্রত্যেক ভারতীয়র ঘরে আর মনে এই ভাবনাটা থাকা দরকার।

জয়পুরেরই আরেকটি মিষ্টির দোকানের মালিক মোহিত জৈন ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে আমাদের বলছিলেন নাম বদল করার কথা। পাক শব্দটা শুনতে তাদের অস্বস্তি হচ্ছিল। তাই মাথা খাটিয়ে আমরা মিষ্টিগুলোর নামে একটা ভারতীয় পরিচয় আনতে চেয়েছি।

পাক মানে পাকিস্তান?
পাক শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে, তবে এখন নানা ভারতীয় ভাষাতেই পাক শব্দটার প্রচলন আছে। আবার ফার্সিতেও পাক শব্দের ব্যবহার আছে।

তবে বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী, পাক শব্দটির একটি অর্থ হলো রন্ধন, রন্ধনকার্য এবং অগ্নিতাপে সিদ্ধকরণ। আবার পক্বতা বা শুভ্রতা বোঝাতেও পাক শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে বাংলা ভাষায়। অন্য অর্থে পাক শব্দটি ঘূর্ণন, আবর্তন বা প্রদক্ষিণও বোঝায়।

ভারতে পাক শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে তিনি লিখছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে যখনই কোনো বস্তু আগুনের মধ্যে দিয়ে পুরোয়, সেটাকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। যখন কোনো ধাতু আগুনে দেওয়া হয়, তখন সেটা একটা সম্পূর্ণ অন্য বস্তুতে পরিণত হয়। কোনো ধাতু গলে গেলে সেটাকে পক অর্থাৎ পবিত্র বলা হয়। এই পক শব্দই রূপান্তরিত হয়ে পাক হয়েছে।

পাক শব্দের ব্যবহার ভারত আর ইরানে দেখা যায়। আবার এর সঙ্গে কিছুটা মেলে, এমন একটি শব্দ জার্মান ভাষাতেও আছে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে ইরান বা ভারতে যে পাক শব্দটি ব্যবহার করা হয়, সেটা জার্মানি থেকে এসেছে বা সেখানকার শব্দটা ভারত বা ইরান থেকে গেছে বলে জানান অজিত ওয়াডনেকর। তিনি বলেন, হিন্দি আর ফার্সি দুই ভাষাতেই পাক শব্দের মূল অর্থ হলো পবিত্র, শুদ্ধ বা নির্মল। হিন্দিতে পাক শব্দটার দুটো অর্থ আছে রান্না করা এবং পবিত্র।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

নিউজটি শেয়ার করুন

মিষ্টির নাম ছিলো মাইসোর পাক বদলে রাখা হলো মাইসোর শ্রী

আপডেট সময় ০৩:৩৬:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় দুই দেশের নাগরিকরাই এ নিয়ে কতটা প্রভাবিত এবং উত্তেজিত ছিলেন সেটা আগেই দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে এই সংঘাত নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য, মিমও তৈরি হয়েছে। এর আগে দক্ষিণ ভারতের শহর হায়দরাবাদভিত্তিক করাচি বেকারি নামের একটি বিখ্যাত বেকারি প্রতিষ্ঠানের নামে কেন পাকিস্তানের শহর করাচি রয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে দোকানে ভাঙচুর চালায় একদল হিন্দুত্ববাদী।

এখন বিতর্ক বেঁধেছে একটি জনপ্রিয় মিষ্টির নাম নিয়ে। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত মাইসোর পাক নামের মিষ্টিতে পাক শব্দটা আছে বলে ওই মিষ্টিটার নামই বদলে দিয়েছে রাজস্থানের জয়পুরের একটি মিষ্টির দোকান। ওই মিষ্টির নতুন নাম তারা দিয়েছে মাইসোর শ্রী।

সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ তো আবার বলছেন মাইসোর পাক-এর নাম বদলে মাইসোর ভারত রাখা উচিত ছিল।

আবার আরেকটি মিষ্টি, যার নাম মোতি পাক সেটারও নাম বদলে মোতি শ্রী রাখা হয়েছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। পাক শব্দটি আছে বলে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কারণ পাকিস্তানকে অনেক সময় সংক্ষেপে পাক বলা হয়ে থাকে। তবে জানা গেছে যে, এই দুই মিষ্টির সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্কই নেই। এগুলো ভারতেরই মিষ্টি।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রাজস্থানের জয়পুরের অন্তত তিনটি বিখ্যাত মিষ্টির দোকান তাদের মিষ্টির নাম বদলেছে। এই সবগুলো মিষ্টির নামেই পাক শব্দটা ছিল। আম পাক-এর নাম রাখা হয়েছে আম শ্রী, গোন্ড পাক হয়েছে গোন্ড শ্রী, স্বর্ণ ভস্ম পাক এর নতুন নাম স্বর্ণ শ্রী এবং চণ্ডী ভস্ম পাক- এর নাম বদলে হয়েছে চণ্ডী শ্রী।

জয়পুরের বৈশালী নগর এলাকার নামকরা মিষ্টির দোকান তেওহার সুইটস্ এর মালিক অঞ্জলি জৈনকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে, মিষ্টির নামে যাতে জাতীয় অহং বোধ প্রতিফলিত হয়, সেজন্যই মিষ্টির নাম বদলে ফেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশাত্মবোধের ভাবনা শুধু সীমান্তে থাকবে কেন, প্রত্যেক ভারতীয়র ঘরে আর মনে এই ভাবনাটা থাকা দরকার।

জয়পুরেরই আরেকটি মিষ্টির দোকানের মালিক মোহিত জৈন ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে আমাদের বলছিলেন নাম বদল করার কথা। পাক শব্দটা শুনতে তাদের অস্বস্তি হচ্ছিল। তাই মাথা খাটিয়ে আমরা মিষ্টিগুলোর নামে একটা ভারতীয় পরিচয় আনতে চেয়েছি।

পাক মানে পাকিস্তান?
পাক শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে, তবে এখন নানা ভারতীয় ভাষাতেই পাক শব্দটার প্রচলন আছে। আবার ফার্সিতেও পাক শব্দের ব্যবহার আছে।

তবে বাংলা একাডেমির অভিধান অনুযায়ী, পাক শব্দটির একটি অর্থ হলো রন্ধন, রন্ধনকার্য এবং অগ্নিতাপে সিদ্ধকরণ। আবার পক্বতা বা শুভ্রতা বোঝাতেও পাক শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে বাংলা ভাষায়। অন্য অর্থে পাক শব্দটি ঘূর্ণন, আবর্তন বা প্রদক্ষিণও বোঝায়।

ভারতে পাক শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে তিনি লিখছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে যখনই কোনো বস্তু আগুনের মধ্যে দিয়ে পুরোয়, সেটাকে পবিত্র বলে মনে করা হয়। যখন কোনো ধাতু আগুনে দেওয়া হয়, তখন সেটা একটা সম্পূর্ণ অন্য বস্তুতে পরিণত হয়। কোনো ধাতু গলে গেলে সেটাকে পক অর্থাৎ পবিত্র বলা হয়। এই পক শব্দই রূপান্তরিত হয়ে পাক হয়েছে।

পাক শব্দের ব্যবহার ভারত আর ইরানে দেখা যায়। আবার এর সঙ্গে কিছুটা মেলে, এমন একটি শব্দ জার্মান ভাষাতেও আছে। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে ইরান বা ভারতে যে পাক শব্দটি ব্যবহার করা হয়, সেটা জার্মানি থেকে এসেছে বা সেখানকার শব্দটা ভারত বা ইরান থেকে গেছে বলে জানান অজিত ওয়াডনেকর। তিনি বলেন, হিন্দি আর ফার্সি দুই ভাষাতেই পাক শব্দের মূল অর্থ হলো পবিত্র, শুদ্ধ বা নির্মল। হিন্দিতে পাক শব্দটার দুটো অর্থ আছে রান্না করা এবং পবিত্র।

সূত্র: বিবিসি বাংলা