ঢাকা ০৫:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না: বিমানবাহিনীর প্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৭:০০:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এই মূলনীতি অনুসরণ করি। তবে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না।

আজ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানবাহিনী প্রধান ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রজ্ঞা, কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অক্ষুণ্ন রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা।

হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা নয়, বরং জাতীয় দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর মতো সংকটে অসামরিক সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়াতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রতিরক্ষাবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইন্ডিজেনাস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে পরনির্ভরশীলতা কমছে। সেই সাথে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে।

এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আজকের এই কমিশনপ্রাপ্তি জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজ থেকে তোমাদের কাঁধে অর্পিত হলো মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সততা, একাগ্রতা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তোমরা দেশ ও জাতির জন্য সেবা করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক কৌশলের যুগে সেনাবাহিনীকে হতে হবে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সম্মিলিত ও যৌথ প্রশিক্ষণনির্ভর। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বা জয়েন্টনেস সাফল্যের পূর্বশর্ত।

এ অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, কৃতি ক্যাডেটদের অভিভাবকবৃন্দ, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী প্রধান প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটরাও অংশগ্রহণ করেন, যা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস হবে না: বিমানবাহিনীর প্রধান

আপডেট সময় ০৭:০০:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন বলেছেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় উন্নয়নশীল দেশ। আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় এই মূলনীতি অনুসরণ করি। তবে আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো রকম আপস করা হবে না।

আজ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিস্থ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিমানবাহিনী প্রধান ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের অফিসার ক্যাডেটদের কমিশনপ্রাপ্তি উপলক্ষে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। তিনি কৃতি ক্যাডেটদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।

এয়ার চিফ মার্শাল বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্ম নেওয়া বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আস্থা ও ঐক্যের প্রতীক। দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রজ্ঞা, কর্তব্যবোধ, বুদ্ধিমত্তা, দেশপ্রেম ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এসেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মাতৃভূমির প্রতিটি ধূলিকণা অক্ষুণ্ন রাখতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অবদান গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, তাদের আত্মত্যাগ ও নিষ্ঠা আমাদের জন্য চিরকালীন অনুপ্রেরণা।

হাসান মাহমুদ খাঁন আরও বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে গৌরবময় ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি দায়িত্বশীল ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শুধু বাহ্যিক হুমকি মোকাবিলা নয়, বরং জাতীয় দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর মতো সংকটে অসামরিক সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়াতে সাংবিধানিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রতিরক্ষাবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইন্ডিজেনাস ক্যাপাসিটি বিল্ডিং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন আমাদের নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে পরনির্ভরশীলতা কমছে। সেই সাথে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে।

এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান সেনাবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের আজকের এই কমিশনপ্রাপ্তি জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজ থেকে তোমাদের কাঁধে অর্পিত হলো মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সততা, একাগ্রতা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে তোমরা দেশ ও জাতির জন্য সেবা করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তনশীল, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, সাইবার যুদ্ধ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক কৌশলের যুগে সেনাবাহিনীকে হতে হবে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও প্রযুক্তিসম্পন্ন। ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সম্মিলিত ও যৌথ প্রশিক্ষণনির্ভর। তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বা জয়েন্টনেস সাফল্যের পূর্বশর্ত।

এ অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, কৃতি ক্যাডেটদের অভিভাবকবৃন্দ, প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজ শেষে বিমান বাহিনী প্রধান প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ কৃতিত্বের জন্য বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, ৮৮তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সমাপনী কুচকাওয়াজে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ক্যাডেটরাও অংশগ্রহণ করেন, যা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির আন্তর্জাতিক মর্যাদাকে আরও সুদৃঢ় করেছে।