ঢাকা ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে দলটির করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ রবিবার (১ জুন) এ রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই রায়ের পর বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বেছে নেবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাক্টিভ বিতর্ক হবে যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের যে রায় ছিল সে রায়কে বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসব ইস্যু কমিশনের সামনে আসবে সেগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করে তারা। এর মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেলো এবং প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সামনে রেফার করা হলো ‘আদার ইস্যু’ হিসেবে। এজন্য আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি। আমরা আশা করি আগামীকালের মধ্যেই মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ হাতে পাব। এই আদেশ আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অ্যাপ্রোচ করব এবং কমিশন অতিদ্রুত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের এক আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।

একইসঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা একই বছর আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।

তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের পাঁচ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার জজ আদালত। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের সাত ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের এক আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আট আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশ

আপডেট সময় ১১:৩১:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও অন্যান্য বিষয়ে দলটির করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ রবিবার (১ জুন) এ রায় ঘোষণা করেন।

হাইকোর্টের রায়ের পর জামায়াতের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়েরকৃত মামলার মাধ্যমে জামায়াতের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আজকের এই রায়ের মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলো।

তিনি বলেন, আমরা আশা করি এই রায়ের পর বাংলাদেশে সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাণবন্ত সংসদ গঠিত হবে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে বেছে নেবে এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এবং আমরা এটাও প্রত্যাশা করি, বাংলাদেশের আগামী সংসদে ইন্টারেস্টিং এবং কনস্ট্রাক্টিভ বিতর্ক হবে যার মাধ্যমে ডেমোক্রেসি একটি স্থায়ী রূপ লাভ করবে।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের যে রায় ছিল সে রায়কে বাতিল ঘোষণা করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন এবং অন্য যেসব ইস্যু কমিশনের সামনে আসবে সেগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করে তারা। এর মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেলো এবং প্রতীকের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সামনে রেফার করা হলো ‘আদার ইস্যু’ হিসেবে। এজন্য আমরা মামলার শর্ট অর্ডার চেয়েছি। আমরা আশা করি আগামীকালের মধ্যেই মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশ হাতে পাব। এই আদেশ আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অ্যাপ্রোচ করব এবং কমিশন অতিদ্রুত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বুঝিয়ে দেবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের এক আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।

একইসঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা একই বছর আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে দলটি।

তবে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের পাঁচ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর চেম্বার জজ আদালত। এরপর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের সাত ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৪ সালের এক আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আট আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এরপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়।