ঢাকা ১১:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

গুহার ভেতরে ৩০৯ বছরের ঘুম

মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
  • আপডেট সময় ০২:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • / ২৬৭ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের বিস্ময়কর সত্য কাহিনি
ধর্মীয় কাহিনি না অলৌকিক ইতিহাস পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা ‘কাহাফ’-এ এমন এক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে গবেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে—গুহার ভেতরে সাত যুবকের ৩০৯ বছরের গভীর ঘুম! মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরার ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে আসহাবে কাহাফ ওয়ার রাকিম’-এর কাহিনি উঠে এসেছে। আরবিতে ‘কাহাফ’ মানে গুহা, ‘রাকিম’ একটি ফলক বা পর্বতের নাম।

কারা ছিলেন এই যুবকেরা
ইতিহাস বলছে, ঘটনাটি খ্রিস্টধর্মের প্রাথমিক যুগের। নাবতি শাসনাধীন অঞ্চলে (বর্তমান জর্ডান) রাকিম নামে একটি শহরে তখন মূর্তিপূজা ছিল প্রধান ধর্ম। কিন্তু সেই সমাজে সাত জন তরুণ—যাঁরা ছিলেন জ্ঞানী ও অনুসন্ধিৎসু—বিশ্বজগতের স্রষ্টার সন্ধানে মনোযোগী হন এবং অবশেষে ঈমান গ্রহণ করেন। তাঁদের ধর্মান্তরের খবর পৌছে যায় মূর্তিপূজক বাদশাহর কানে। যুবকদের ডেকে পাঠানো হয় রাজদরবারে। সাহসিকতার সঙ্গে তাঁরা ঈমানের কথা জানালে রাজার ক্রোধ দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তবে প্রথমে সুযোগ দেন মত বদলানোর।

গুহায় আশ্রয় ও শুরু হয় অলৌকিক ঘুম
নির্যাতনের ভয়ে নয়—বিশ্বাস রক্ষার জন্য যুবকেরা পালিয়ে আশ্রয় নেন পাহাড়ের গুহায়। তাঁদের সঙ্গী ছিল কিতমির নামের একটি কুকুর। আল্লাহ তাঁদের সেই গুহায় এক দীর্ঘ নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে দেন। কোরআনের ভাষ্যে বলা হয়েছে, “আমি তাদের গুহায় ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েক বছর রেখে দিলাম।” (সুরা কাহাফ, ১১) এই ঘুম চলেছিল ঠিক ৩ শ’ ৯ বছর।

বদলে যায় ইতিহাস, ভাঙে ঘুম
তাঁদের ঘুমের মাঝে কালের চাকা ঘুরে যায়। রাকিম শহরে ঘটে বিপ্লব, রাজার পতন হয়, রোমান খ্রিষ্টানরা অঞ্চলটি দখল করে পেত্রা নাম দেয়। যুবকেরা যখন জেগে ওঠেন, তাঁদের ধারণা—এক দিন বা তার কিছু অংশ ঘুমিয়েছেন। একজনকে পাঠানো হয় খাবার আনতে। কিন্তু শহরে ঢুকেই তিনি বিপাকে পড়েন। দোকানির হাতে যখন তিনি তুলে দেন সেই প্রাচীন মুদ্রা, বিস্ময়ে চমকে ওঠে সবাই। খবর ছড়িয়ে পড়ে, রাজাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর তাঁরা ফিরে যান গুহায়। এবং ইতিহাস বলছে, সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

গুহার মুখে নির্মিত হয় মসজিদ
নতুন শাসক সেই অলৌকিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গুহার মুখে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও সেই স্মৃতিকে ধারণ করে রেখেছে।

গুহার অবস্থান কোথায়
গুহার নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও, অধিকাংশ ইসলামি তাফসিরবিদ মনে করেন এটি জর্ডানের পেত্রা অঞ্চলে অবস্থিত। তাফসিরে তাবারি অনুসারে, ইবনে আব্বাস (রা.) গুহাটিকে চিহ্নিত করেছেন জর্ডানের আয়লার (আকাবা উপসাগর) কাছাকাছি। ঐতিহাসিক দলিল বলছে, নাবতিদের শাসন ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সাল থেকে ১০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। পরবর্তীতে রোমানরা অঞ্চলটি দখল করে এবং রাকিমের নাম পাল্টে রাখে পেট্রা।

নিউজটি শেয়ার করুন

গুহার ভেতরে ৩০৯ বছরের ঘুম

আপডেট সময় ০২:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আসহাবে কাহাফের বিস্ময়কর সত্য কাহিনি
ধর্মীয় কাহিনি না অলৌকিক ইতিহাস পবিত্র কোরআনের ১৮তম সুরা ‘কাহাফ’-এ এমন এক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে গবেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে—গুহার ভেতরে সাত যুবকের ৩০৯ বছরের গভীর ঘুম! মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরার ৯ থেকে ২৬ নম্বর আয়াতে আসহাবে কাহাফ ওয়ার রাকিম’-এর কাহিনি উঠে এসেছে। আরবিতে ‘কাহাফ’ মানে গুহা, ‘রাকিম’ একটি ফলক বা পর্বতের নাম।

কারা ছিলেন এই যুবকেরা
ইতিহাস বলছে, ঘটনাটি খ্রিস্টধর্মের প্রাথমিক যুগের। নাবতি শাসনাধীন অঞ্চলে (বর্তমান জর্ডান) রাকিম নামে একটি শহরে তখন মূর্তিপূজা ছিল প্রধান ধর্ম। কিন্তু সেই সমাজে সাত জন তরুণ—যাঁরা ছিলেন জ্ঞানী ও অনুসন্ধিৎসু—বিশ্বজগতের স্রষ্টার সন্ধানে মনোযোগী হন এবং অবশেষে ঈমান গ্রহণ করেন। তাঁদের ধর্মান্তরের খবর পৌছে যায় মূর্তিপূজক বাদশাহর কানে। যুবকদের ডেকে পাঠানো হয় রাজদরবারে। সাহসিকতার সঙ্গে তাঁরা ঈমানের কথা জানালে রাজার ক্রোধ দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। তবে প্রথমে সুযোগ দেন মত বদলানোর।

গুহায় আশ্রয় ও শুরু হয় অলৌকিক ঘুম
নির্যাতনের ভয়ে নয়—বিশ্বাস রক্ষার জন্য যুবকেরা পালিয়ে আশ্রয় নেন পাহাড়ের গুহায়। তাঁদের সঙ্গী ছিল কিতমির নামের একটি কুকুর। আল্লাহ তাঁদের সেই গুহায় এক দীর্ঘ নিদ্রায় আচ্ছন্ন করে দেন। কোরআনের ভাষ্যে বলা হয়েছে, “আমি তাদের গুহায় ঘুমন্ত অবস্থায় কয়েক বছর রেখে দিলাম।” (সুরা কাহাফ, ১১) এই ঘুম চলেছিল ঠিক ৩ শ’ ৯ বছর।

বদলে যায় ইতিহাস, ভাঙে ঘুম
তাঁদের ঘুমের মাঝে কালের চাকা ঘুরে যায়। রাকিম শহরে ঘটে বিপ্লব, রাজার পতন হয়, রোমান খ্রিষ্টানরা অঞ্চলটি দখল করে পেত্রা নাম দেয়। যুবকেরা যখন জেগে ওঠেন, তাঁদের ধারণা—এক দিন বা তার কিছু অংশ ঘুমিয়েছেন। একজনকে পাঠানো হয় খাবার আনতে। কিন্তু শহরে ঢুকেই তিনি বিপাকে পড়েন। দোকানির হাতে যখন তিনি তুলে দেন সেই প্রাচীন মুদ্রা, বিস্ময়ে চমকে ওঠে সবাই। খবর ছড়িয়ে পড়ে, রাজাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর তাঁরা ফিরে যান গুহায়। এবং ইতিহাস বলছে, সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

গুহার মুখে নির্মিত হয় মসজিদ
নতুন শাসক সেই অলৌকিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গুহার মুখে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন, যা আজও সেই স্মৃতিকে ধারণ করে রেখেছে।

গুহার অবস্থান কোথায়
গুহার নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোরআনে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও, অধিকাংশ ইসলামি তাফসিরবিদ মনে করেন এটি জর্ডানের পেত্রা অঞ্চলে অবস্থিত। তাফসিরে তাবারি অনুসারে, ইবনে আব্বাস (রা.) গুহাটিকে চিহ্নিত করেছেন জর্ডানের আয়লার (আকাবা উপসাগর) কাছাকাছি। ঐতিহাসিক দলিল বলছে, নাবতিদের শাসন ছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সাল থেকে ১০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। পরবর্তীতে রোমানরা অঞ্চলটি দখল করে এবং রাকিমের নাম পাল্টে রাখে পেট্রা।