দেশে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে দেশে দেড় হাজারের বেশি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে ১,৫৮৭টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

গত বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১,২৬৫টি, অর্থাৎ এ বছর ২০ শতাংশ বেশি হত্যা মামলা হয়েছে। গড়ে প্রতিদিন ১০ জন এবং প্রতি মাসে ৩১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন।

মাসভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ২৯৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০টি, মার্চে ৩১৬টি, এপ্রিলে ৩৩৬টি এবং মে মাসে সর্বোচ্চ ৩৪১টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। ঢাকা রেঞ্জে সবচেয়ে বেশি ৩৭৬টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে রাজধানীতে ১৬৮টি। এর ৩৯ শতাংশই রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির প্রতিবেদন বলছে, এই পাঁচ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৬৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে বিএনপির ৪৫ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। আধিপত্য বিস্তার, প্রতিশোধ, চাঁদাবাজি ও দখলের কারণে এসব সহিংসতা বেশি ঘটছে।

প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, গণপিটুনিতে ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭০ জন গুলিবিদ্ধ এবং শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হয়েছে। ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঝিনাইদহে হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটেছে।

পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা অর্থের বিনিময়ে হত্যাকাণ্ডে জড়াচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ তৎপর এবং অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা কমাতে পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে দিনে গড়ে ১০টি হত্যাকাণ্ড ঘটছে। চলতি বছরের প্রথম সাড়ে পাঁচ মাসে ময়মনসিংহে ৪৪, কুমিল্লায় ৪২, সিরাজগঞ্জে ৩৮, নারায়ণগঞ্জে ৩১ এবং ঝিনাইদহে ২৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২৭, নেত্রকোনায় ২৭, যশোরে ২৪, নওগাঁয় ২৩, ফরিদপুরে ২১, শেরপুরে ২১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০, মুন্সীগঞ্জে ১৭, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৫, নাটোরে ১৫, বরিশালে ১৪, শরীয়তপুরে ১৩, বাগেরহাটে ১৪, খাগড়াছড়িতে ১৪, জয়পুরহাটে ১৩, লক্ষ্মীপুরে ১২, মৌলভীবাজারে ১২, বরগুনায় সাত, জামালপুরে আট, গোপালগঞ্জে সাত, চুয়াডাঙ্গায় চার, কুড়িগ্রামে ছয়, মেহেরপুরে সাত এবং রাঙামাটিতে সাতটি হত্যাকাণ্ড ঘটে।