ঢাকা ০৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
খামেনির দাবি 'সম্মানিত মানুষেরা আনন্দিত'

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:২৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধের তীব্র উত্তেজনা। সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এই হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দাবি করেছেন, এই হামলা বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে। কিন্তু কেন এই হামলা, আর এর প্রভাবই বা কী হতে পারে? চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মধ্যরাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেন।

এই ভিডিওতে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে।”

এই এক মিনিট চার সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয় ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ভয়াবহ দৃশ্য দিয়ে। ভিডিওটির ক্যাপশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের এক করুণ চিত্র তুলে ধরে। এর পরপরই ভিডিওতে দেখানো হয় ইসরায়েলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য এবং এর ফলে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মানুষের উল্লাস। ভিডিওর আরেকটি ক্যাপশনে বলা হয়, “জায়নবাদীদের হামলার প্রতিবাদে ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্ববাসীর উল্লাস।”

ভিডিওতে আরও দেখানো হয় ইসরায়েলে হামলার ফলে সৃষ্ট ধ্বংসলীলা এবং উদ্ধার তৎপরতার দৃশ্য। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের এই হামলা ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো এই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেনি, যা পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

ইরান দাবি করছে, এই হামলা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ইরান বরাবরই সোচ্চার। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইরান তাদের প্রতিবাদের একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছে, যা ইসরায়েলকে তাদের আগ্রাসী নীতি থেকে বিরত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে আদর্শগত এবং কৌশলগত বিভেদ রয়েছে। ইসরায়েল ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো আগ্রাসনের জন্য দায়ী করে এবং এই অঞ্চলে ইসরায়েলের প্রভাব বিস্তারের বিরোধিতা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আঞ্চলিক সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ক্ষমতার ভারসাম্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে ইরান সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইসরায়েলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই ধরনের সরাসরি সংঘাতের ঘটনা এই অঞ্চলে প্রায় বিরল, এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

খামেনির দাবি 'সম্মানিত মানুষেরা আনন্দিত'

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: বিশ্বজুড়ে আলোড়ন

আপডেট সময় ১২:২৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে যুদ্ধের তীব্র উত্তেজনা। সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এই হামলার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দাবি করেছেন, এই হামলা বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে। কিন্তু কেন এই হামলা, আর এর প্রভাবই বা কী হতে পারে? চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) মধ্যরাতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ একটি ভিডিও শেয়ার করেন।

এই ভিডিওতে তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সম্মানিত মানুষদের আনন্দিত করেছে।”

এই এক মিনিট চার সেকেন্ডের ভিডিওটি শুরু হয় ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ভয়াবহ দৃশ্য দিয়ে। ভিডিওটির ক্যাপশনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে: গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের এক করুণ চিত্র তুলে ধরে। এর পরপরই ভিডিওতে দেখানো হয় ইসরায়েলের ওপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দৃশ্য এবং এর ফলে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে মানুষের উল্লাস। ভিডিওর আরেকটি ক্যাপশনে বলা হয়, “জায়নবাদীদের হামলার প্রতিবাদে ইরানের প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্ববাসীর উল্লাস।”

ভিডিওতে আরও দেখানো হয় ইসরায়েলে হামলার ফলে সৃষ্ট ধ্বংসলীলা এবং উদ্ধার তৎপরতার দৃশ্য। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের এই হামলা ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। তবে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো এই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেনি, যা পরিস্থিতিকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে।

ইরান দাবি করছে, এই হামলা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ইরান বরাবরই সোচ্চার। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইরান তাদের প্রতিবাদের একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দেখছে, যা ইসরায়েলকে তাদের আগ্রাসী নীতি থেকে বিরত থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন নয়। দুই দেশের মধ্যে আদর্শগত এবং কৌশলগত বিভেদ রয়েছে। ইসরায়েল ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো আগ্রাসনের জন্য দায়ী করে এবং এই অঞ্চলে ইসরায়েলের প্রভাব বিস্তারের বিরোধিতা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলেছে এবং আঞ্চলিক সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ক্ষমতার ভারসাম্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যেখানে ইরান সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইসরায়েলকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই ধরনের সরাসরি সংঘাতের ঘটনা এই অঞ্চলে প্রায় বিরল, এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।