০৭:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক অপসারিত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন, ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১০:১৭:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে পদ থেকে অপসারণের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। শুক্রবার আদালত এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, যা দেশটির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

আদালতের এই রায়ের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুসারে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুন হিউং-বে রায়ের ঘোষণায় বলেন, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন এবং তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইউনের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছিল এবং এটি জনগণের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। বিশেষ করে, সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ইউন দেশের সমাজ, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন বলে আদালত উল্লেখ করে।

বিচারপতি মুন হিউং-বে আরও জানান যে, আদালতের আটজন বিচারপতির সকলেই সর্বসম্মতিক্রমে এই অপসারণের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এই রায় ঘোষণার পরপরই প্রেসিডেন্ট ইউনের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা “আমরা জিতেছি!” স্লোগান দিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এই রায় দেশটিতে কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, ৬৪ বছর বয়সী ইউন এখনও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যদিও মার্চ মাসে আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করলে তিনি মুক্তি পান।

এই রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর, যখন প্রেসিডেন্ট ইউন আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করেন। তবে, তার এই প্রচেষ্টা মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ব্যর্থ হয়, যখন সংসদ সদস্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা অতিক্রম করে পার্লামেন্টে প্রবেশ করে আইনটি বাতিল করে দেন। এর পরপরই ইউন সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

পরবর্তীতে ইউন দাবি করেন যে, তার কখনোই পূর্ণাঙ্গ সামরিক শাসন জারির ইচ্ছা ছিল না এবং এই ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে বিষয়টির গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করেন।

ইউনের সামরিক আইন জারির চেষ্টার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছিল। আদালতের এই রায় সেই রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

সাংবিধানিক আদালত কর্তৃক অপসারিত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন, ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন

আপডেট সময় ১০:১৭:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ এপ্রিল ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে পদ থেকে অপসারণের ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। শুক্রবার আদালত এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, যা দেশটির সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।

আদালতের এই রায়ের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান অনুসারে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু দেশের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুন হিউং-বে রায়ের ঘোষণায় বলেন, প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন এবং তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ইউনের কর্মকাণ্ড গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছিল এবং এটি জনগণের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা। বিশেষ করে, সামরিক আইন জারির মাধ্যমে ইউন দেশের সমাজ, অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন বলে আদালত উল্লেখ করে।

বিচারপতি মুন হিউং-বে আরও জানান যে, আদালতের আটজন বিচারপতির সকলেই সর্বসম্মতিক্রমে এই অপসারণের পক্ষে রায় দিয়েছেন।

এই রায় ঘোষণার পরপরই প্রেসিডেন্ট ইউনের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত হাজার হাজার মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। তারা “আমরা জিতেছি!” স্লোগান দিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। এই রায় দেশটিতে কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, ৬৪ বছর বয়সী ইউন এখনও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, যদিও মার্চ মাসে আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল করলে তিনি মুক্তি পান।

এই রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত হয়েছিল গত বছরের ৩ ডিসেম্বর, যখন প্রেসিডেন্ট ইউন আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করেন। তবে, তার এই প্রচেষ্টা মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ব্যর্থ হয়, যখন সংসদ সদস্যরা নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা অতিক্রম করে পার্লামেন্টে প্রবেশ করে আইনটি বাতিল করে দেন। এর পরপরই ইউন সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

পরবর্তীতে ইউন দাবি করেন যে, তার কখনোই পূর্ণাঙ্গ সামরিক শাসন জারির ইচ্ছা ছিল না এবং এই ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে বিষয়টির গুরুত্ব হ্রাস করার চেষ্টা করেন।

ইউনের সামরিক আইন জারির চেষ্টার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছিল। আদালতের এই রায় সেই রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।