অর্থ সংকটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ঝুঁকিতে মা ও শিশুস্বাস্থ্য

- আপডেট সময় ১১:২১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৯ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা, ৭ এপ্রিল: দেশের ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র তীব্র অর্থ সংকটের মুখে পড়েছে। গত ১০ মাস ধরে এসব কেন্দ্রে বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, ব্যাহত হচ্ছে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে করে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত পরিকল্পনার (ওপি) আওতায় পরিচালিত এসব কেন্দ্রের অর্ধেক ব্যয় সরকার এবং বাকিটা দাতা সংস্থাগুলো বহন করে। নতুন স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) অনুমোদন না হওয়ায় এবং দাতা সংস্থার সাড়া না পাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৬৫-৭০ লাখ মানুষ ওষুধ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সেবাসহ ২৮ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওষুধ ও উপকরণের অভাবে সেবা ব্যাহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক স্থানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ এবং বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল, যাদের বেসরকারি চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই। পরিবার পরিকল্পনার উপকরণেও সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে ২২ জন শিশু মারা গেলেও, ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারও বেড়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা বন্ধ হলে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার আরও বাড়বে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মো. আবু জাফর জানান, আগামী মাসের মধ্যে সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা নিশ্চিত করা হবে।
আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে, যার এবারের প্রতিপাদ্য ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’। এমন সময়ে এই সংকট স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।