টেলিফোন এলো যেভাবে: গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণফোনের জন্মকথা শোনালেন ড. ইউনূস

- আপডেট সময় ০৩:৩৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
বিনিয়োগ সম্মেলনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশে টেলিকম শিল্পের সূচনার এক চমৎকার গল্প শোনালেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংক কীভাবে জন্ম দিল আজকের গ্রামীণফোনকে, সেই রোমাঞ্চকর ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই স্মৃতিচারণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরেন। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যে দেশেই থাকুন না কেন, ভেতরে কোথাও না কোথাও একটি ছোট্ট ‘৭৪ লুকিয়ে আছে। আপনারা সেই অভাব দেখতে চান না, মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাকে আড়াল করতে চান।
আমি বরাবরই বলে এসেছি, শুধু অর্থ দিয়ে গরিব মানুষের সমস্যার সমাধান হয় না। সমাধান লুকিয়ে আছে অবকাঠামো নির্মাণে, মানুষের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলার মধ্যে। ক্ষুদ্র ঋণ ছিল একটি ছোট পদক্ষেপ। এরপর একটি অভাবনীয় পরিকল্পনা করা হলো সরকারের টেলিফোন লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে।
আমাদের হয়তো তখন টেলিফোনের প্রয়োজনও ছিল না, কারণ বেশিরভাগ টেলিফোনই কাজ করত না। তাহলে কেন টেলিফোন কোম্পানির লাইসেন্স? সরকার জানতে চেয়েছিল, টেলিফোন কোম্পানি দিয়ে কী হবে। আমি বলেছিলাম, এটি গরিব নারীদের জন্য। অবশেষে আমরা লাইসেন্স পেলাম। গ্রামীণ ব্যাংকের হাত ধরেই জন্ম নিল গ্রামীণফোন।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের জ্ঞানের অভাব থাকায় শুরুতে কেউ অংশীদার হতে চায়নি। কারণ বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের কোনো ভবিষ্যৎ, কোনো বাজার ছিল না। তাই আমরা বহু আন্তর্জাতিক দরজায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।
অবশেষে, ব্যক্তিগতভাবে নরওয়ের টেলিনরের চেয়ারম্যানের সাথে আমার পরিচয় ছিল। আমি তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম এবং সাহায্য চাইলাম। আমি ব্যাখ্যা করলাম কেন আমরা বাজারে মোবাইল ফোন আনতে চাই এবং কেন তা নারীদের হাতে তুলে দিতে চাই। তিনি গুরুত্বের সাথে শুনলেন, কিন্তু তার কোম্পানির বোর্ড রাজি হলো না। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানত না, এমনকি নামও শোনেনি।
যতবারই টেলিনরের বোর্ড প্রত্যাখ্যান করত, ততবারই তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের রাজি করাতে সক্ষম হন। তখনকার সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, হয়তো দুই লাখ মোবাইল গ্রাহক পাওয়া যাবে। আমি বলেছিলাম, এটা কী বলছেন! এর চেয়ে দশ গুণ বেশি গ্রাহক হবে। আর আজ এটি দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি।”
শুরুর দিকে কেবল গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র নারীরাই ফোন নিতে পারত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তারা জানত না কীভাবে ফোন ব্যবহার করতে হয়। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিলাম। খুব দ্রুতই প্রায় এক লাখ নারী সারা দেশে ফোন সেবা দেওয়া শুরু করলো। এটি এতটাই জনপ্রিয় হলো যে সবাই ফোন নিতে শুরু করলো।
পুরো কোম্পানির চিত্রটাই পাল্টে গেল। ঠিক সেই সময়ে অন্যান্য দেশে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ শুরু করছিল, তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল শহরগুলো। আমাদের খবর পত্রপত্রিকায় উঠে এলো, তাদের নয়।
তখন থেকেই বিশ্ব জানতে পারলো কীভাবে গ্রামে মোবাইল ফোন পৌঁছে গেল। টেলিফোন শিল্প বিশ্বব্যাপী একটি নতুন রূপ পেলো। এই কথাগুলো বলার কারণ হলো— বিশ্বকে বদলানোর মতো অসাধারণ চিন্তায় বাংলাদেশ পরিপূর্ণ।”