০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

চলে গেলেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস ইয়োসা

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০১:১২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নেভে গেল। সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রখ্যাত পেরুভিয়ান লেখক মারিও বার্গাস ইয়োসা আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। স্থানীয় সময় রোববার, লিমায় নিজ পরিবারের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পুত্র আলভারো বার্গাস ইয়োসা সামাজিক মাধ্যম এক্সে পারিবারিক বিবৃতির মাধ্যমে এই দুঃসংবাদটি জানান।

সাহিত্যজগতে মারিও বার্গাস ইয়োসা’র অবদান চিরস্মরণীয়। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তার ভাষাশৈলী ও সমাজমনস্ক লেখনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। স্প্যানিশ ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও তার লেখাগুলো অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বহু ভাষায়, স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পাঠকসমাজের হৃদয়ে।

তার সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে ‘লা গাইড দেল ইনকা’ নাটক দিয়ে। তবে পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘লা সিউদাদ ই লস পেররোস’ (ইংরেজি: The Time of the Hero)।

তার স্মরণীয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘Conversation in the Cathedral’, ‘The War of the End of the World’, এবং ‘Aunt Julia and the Scriptwriter’। পরবর্তী বইটি অবলম্বনে তৈরি হয় হলিউড চলচ্চিত্র ‘Tune in Tomorrow’

পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের বাবা শান্তিতে বিদায় নিয়েছেন, পরিবার পাশে ছিল। তিনি শুধু আমাদের নয়, সারাবিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।”

বার্গাস ইয়োসার জন্ম ১৯৩৬ সালে পেরুর আরেকিপায়। শৈশব কেটেছে বলিভিয়ার কোচাবাম্বায়। সাংবাদিকতা থেকে লেখালেখিতে প্রবেশ, এরপর প্যারিস, মাদ্রিদ, লন্ডন, ওয়াশিংটন এবং বার্সেলোনা হয়ে শেষমেশ ১৯৭৪ সালে পেরুতে ফিরে আসা—সবটাই ছিল ঘটনাবহুল এক জীবনের অংশ।

১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে হেরে যান আলবের্তো ফুজিমোরির কাছে। এরপর অভিবাসন নিয়ে চলে যান স্পেনে এবং ১৯৯৩ সালে গ্রহণ করেন স্প্যানিশ নাগরিকত্ব। ১৯৯৪ সালে অর্জন করেন মর্যাদাসম্পন্ন সেরভান্তেস পুরস্কার।

নোবেল জয়ের পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার সাহিত্যিক অনুপ্রেরণা ছিলেন ফরাসি লেখক গুস্তাভে ফ্লবার্ত।

মারিও বার্গাস ইয়োসার মৃত্যুতে পেরুর রাষ্ট্রপতি এবং সরকারি দপ্তরসহ দেশটির সর্বস্তরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশ্বের সাহিত্যজগৎ হারাল এক মহান কণ্ঠস্বর, যার সৃষ্টি চিরকাল আলো জ্বালাবে পাঠকের মনে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

চলে গেলেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মারিও বার্গাস ইয়োসা

আপডেট সময় ০১:১২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বসাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র নেভে গেল। সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রখ্যাত পেরুভিয়ান লেখক মারিও বার্গাস ইয়োসা আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। স্থানীয় সময় রোববার, লিমায় নিজ পরিবারের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার পুত্র আলভারো বার্গাস ইয়োসা সামাজিক মাধ্যম এক্সে পারিবারিক বিবৃতির মাধ্যমে এই দুঃসংবাদটি জানান।

সাহিত্যজগতে মারিও বার্গাস ইয়োসা’র অবদান চিরস্মরণীয়। ২০১০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। সুইডিশ অ্যাকাডেমি তার ভাষাশৈলী ও সমাজমনস্ক লেখনীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। স্প্যানিশ ভাষায় সাহিত্য রচনা করলেও তার লেখাগুলো অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বহু ভাষায়, স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক পাঠকসমাজের হৃদয়ে।

তার সাহিত্যিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে ‘লা গাইড দেল ইনকা’ নাটক দিয়ে। তবে পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘লা সিউদাদ ই লস পেররোস’ (ইংরেজি: The Time of the Hero)।

তার স্মরণীয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘Conversation in the Cathedral’, ‘The War of the End of the World’, এবং ‘Aunt Julia and the Scriptwriter’। পরবর্তী বইটি অবলম্বনে তৈরি হয় হলিউড চলচ্চিত্র ‘Tune in Tomorrow’

পারিবারিক বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের বাবা শান্তিতে বিদায় নিয়েছেন, পরিবার পাশে ছিল। তিনি শুধু আমাদের নয়, সারাবিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।”

বার্গাস ইয়োসার জন্ম ১৯৩৬ সালে পেরুর আরেকিপায়। শৈশব কেটেছে বলিভিয়ার কোচাবাম্বায়। সাংবাদিকতা থেকে লেখালেখিতে প্রবেশ, এরপর প্যারিস, মাদ্রিদ, লন্ডন, ওয়াশিংটন এবং বার্সেলোনা হয়ে শেষমেশ ১৯৭৪ সালে পেরুতে ফিরে আসা—সবটাই ছিল ঘটনাবহুল এক জীবনের অংশ।

১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়ে রাজনীতির ময়দানে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে হেরে যান আলবের্তো ফুজিমোরির কাছে। এরপর অভিবাসন নিয়ে চলে যান স্পেনে এবং ১৯৯৩ সালে গ্রহণ করেন স্প্যানিশ নাগরিকত্ব। ১৯৯৪ সালে অর্জন করেন মর্যাদাসম্পন্ন সেরভান্তেস পুরস্কার।

নোবেল জয়ের পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার সাহিত্যিক অনুপ্রেরণা ছিলেন ফরাসি লেখক গুস্তাভে ফ্লবার্ত।

মারিও বার্গাস ইয়োসার মৃত্যুতে পেরুর রাষ্ট্রপতি এবং সরকারি দপ্তরসহ দেশটির সর্বস্তরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিশ্বের সাহিত্যজগৎ হারাল এক মহান কণ্ঠস্বর, যার সৃষ্টি চিরকাল আলো জ্বালাবে পাঠকের মনে।