ভারতের সঙ্গে আকাশসীমা ও বাণিজ্য বন্ধ করল পাকিস্তান

- আপডেট সময় ০৬:০৯:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪ বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, পাকিস্তান শুধু ভারতের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যই বন্ধ করেনি, তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে বাণিজ্যের জন্যও তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না।
এছাড়া ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে প্রায় দুই ঘণ্টার জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
এই পদক্ষেপ ভারতের বুধবারের সিদ্ধান্তের জবাবে এসেছে। ভারত ঘোষণা করেছিল যে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে সমর্থন বন্ধ না করা পর্যন্ত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত থাকবে।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। তারা বলেছে, সিন্ধু নদী ও তার শাখার পানির প্রবাহে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তা যুদ্ধের সমান গণ্য হবে। পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি ভারতের এই পদক্ষেপকে “জল যুদ্ধ” এবং “অবৈধ” বলে অভিহিত করেছেন।
সিন্ধু জলচুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যা ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়। এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদী ব্যবস্থার ছয়টি নদীর পানি ভাগাভাগির নিয়ম নির্ধারণ করে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারত রাভি, বিয়াস ও সতলুজ নদীর পানির নিয়ন্ত্রণ পায়, আর পাকিস্তান পায় সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি। পাকিস্তানের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য এই পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির ৮০ শতাংশ চাষের জমি এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল।
পাকিস্তানের এই পাল্টা পদক্ষেপের পেছনে কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ হামলার প্রভাব রয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। ভারতের দাবি, হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ জড়িত, যা লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ভারতের অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল, দিল্লিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার এবং দুই দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত। পাকিস্তানও ইসলামাবাদে ভারতীয় হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার করেছে এবং ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সব ভিসা বাতিল করেছে।
পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি পাঞ্জাব ও সিন্ধের গরিব কৃষকদের ক্ষতি করবে। পাকিস্তান এখন বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী হুসাইন।
এই ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা পাকিস্তানের কৃষি, খাদ্য ও পানি নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। তবে ভারতের পক্ষে নদীর পানি পুরোপুরি বন্ধ করা তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়, কারণ এর জন্য বাঁধ নির্মাণে বছরের পর বছর লাগবে। এটি মূলত পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।