০৩:৩৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

কলকাতায় হোটেলে আগুনের ঘটনায় নিহত ১৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:০৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১১ বার পড়া হয়েছে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত মধ্য কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির একটি হোটেলে ওই অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। খবর এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনা ঘটেছে ঋতুরাজ নামের একটি হোটেলে। যার অবস্থান বড়বাজার থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪টি মরদেহ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের এরই মধ্যে একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে।

তবে এখনো কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কী কারণে ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সে বিষয়ে। রাজ্য প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে তিনি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ‌কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন।

আগুন লাগার পর হোটেলের কার্নিশ থেকে একজন নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন। তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দেখে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছে। তার নাম আনন্দ পাসোয়ান।

জানা গেছে, কলকাতার বড়বাজার এলাকার মেছুয়া ফলপট্টির এক আবাসিক হোটেলে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে আগুন লাগে। এরপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে আতঙ্কে হোটেলের ছাদে উঠে পড়েন।

হোটেলটি তীব্র ধোয়ার কারণে গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ওই হোটেলে ঢোকা এবং বের হওয়ার একটাই সিঁড়ি। তাই অনেকেই নিচে নামতে না পেরে হোটেলের ভেতরেই আটকা পড়েন।
মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে আতঙ্কিত লোকজন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। দমকল বাহিনীর হাইড্রোলিক ল্যাডার এনে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার কাজে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারাও।

প্রথমে আগুন দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন ফলপট্টিতে থাকা লোকজন। খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনী ও বড়বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। ঘটনাস্থলে দমকল বাহিনী পৌঁছে দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। দমকলের মোট ১০টি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ।

কলকাতা বড়বাজার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং বিধান সরণির সংযোগকারী ওই রাস্তাটি বেশ ঘিঞ্জি। যে হোটেলে আগুন লেগেছে তার আশপাশে প্রচুর আবাসিক হোটেল, দোকান এবং বাড়ি আছে। ফলে দমকল বাহিনীর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগে যায়। এছাড়াও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা ছিল।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, অন্তত ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছাদের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয় বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালের দিকে। ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় আবাসিক হোটেলের ভেতর থেকে।

কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের নারী এবং শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা দুর্ঘটনার পর স্থানীয় সময় ভোর চারটার দিকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কলকাতার এই অঞ্চলটি ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় দমকল বাহিনীকে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। তবে কীভাবে আগুন লাগলো তা জানা যায়নি। তবে দমকল ও কলকাতা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। এই ঘটনার এফআইআর হবে এবং ঘটনার তদন্ত হবে।

কলকাতা পুলিশ ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছে। ফরেন্সিক দল বুধবার ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) কীভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলো তা খতিয়ে দেখবে।

পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেনে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আগুন লেগেছে…অনেক মানুষ এখনও ভবনে আটকা পড়ে আছেন। কোনো নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না…আমি জানি না কর্পোরেশন কী করছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

কলকাতায় হোটেলে আগুনের ঘটনায় নিহত ১৪

আপডেট সময় ১২:০৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার একটি হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত মধ্য কলকাতার বড়বাজারের মেছুয়ার ফলপট্টির একটি হোটেলে ওই অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। খবর এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনা ঘটেছে ঋতুরাজ নামের একটি হোটেলে। যার অবস্থান বড়বাজার থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এরই মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪টি মরদেহ। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের এরই মধ্যে একটি বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে।

তবে এখনো কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কী কারণে ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সে বিষয়ে। রাজ্য প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে তিনি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ‌কঠোর নজরদারির আহ্বান জানিয়েছেন।

আগুন লাগার পর হোটেলের কার্নিশ থেকে একজন নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন। তাকে উদ্ধার করে সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দেখে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ ওই ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেছে। তার নাম আনন্দ পাসোয়ান।

জানা গেছে, কলকাতার বড়বাজার এলাকার মেছুয়া ফলপট্টির এক আবাসিক হোটেলে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে আগুন লাগে। এরপর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে আতঙ্কে হোটেলের ছাদে উঠে পড়েন।

হোটেলটি তীব্র ধোয়ার কারণে গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়। ওই হোটেলে ঢোকা এবং বের হওয়ার একটাই সিঁড়ি। তাই অনেকেই নিচে নামতে না পেরে হোটেলের ভেতরেই আটকা পড়েন।
মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে আতঙ্কিত লোকজন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। দমকল বাহিনীর হাইড্রোলিক ল্যাডার এনে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার কাজে হাত লাগান স্থানীয় বাসিন্দারাও।

প্রথমে আগুন দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন ফলপট্টিতে থাকা লোকজন। খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনী ও বড়বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। ঘটনাস্থলে দমকল বাহিনী পৌঁছে দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। দমকলের মোট ১০টি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ।

কলকাতা বড়বাজার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং বিধান সরণির সংযোগকারী ওই রাস্তাটি বেশ ঘিঞ্জি। যে হোটেলে আগুন লেগেছে তার আশপাশে প্রচুর আবাসিক হোটেল, দোকান এবং বাড়ি আছে। ফলে দমকল বাহিনীর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগে যায়। এছাড়াও দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা ছিল।

কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, অন্তত ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ছাদের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দিয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হয় বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালের দিকে। ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় আবাসিক হোটেলের ভেতর থেকে।

কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের নারী এবং শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা দুর্ঘটনার পর স্থানীয় সময় ভোর চারটার দিকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কলকাতার এই অঞ্চলটি ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় দমকল বাহিনীকে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়। তবে কীভাবে আগুন লাগলো তা জানা যায়নি। তবে দমকল ও কলকাতা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। এই ঘটনার এফআইআর হবে এবং ঘটনার তদন্ত হবে।

কলকাতা পুলিশ ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) গঠন করেছে। ফরেন্সিক দল বুধবার ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) কীভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলো তা খতিয়ে দেখবে।

পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেনে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। আগুন লেগেছে…অনেক মানুষ এখনও ভবনে আটকা পড়ে আছেন। কোনো নিরাপত্তা বা সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না…আমি জানি না কর্পোরেশন কী করছে।