০১:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

অনুমতি ছাড়া হজ নয়: ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কঠোর বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০২:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

হজ পালনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ জানিয়েছে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে, সকলের প্রতি হজ পারমিট (অনুমতি) ছাড়া হজ পালন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যটি বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি হজ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা অথবা সৌদি আরবের অন্য কোনো পবিত্র স্থানে অবস্থান না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, যারা হজ বিধিমালা অমান্য করে ভিজিট ভিসায় হজ পালনের চেষ্টা করবেন, তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, পরিবহন করা, সংরক্ষিত হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা করা এবং তাদের জন্য হোটেল বা বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকেও বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বছর সৌদি সরকার হজযাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ আরও সহজ করতে, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কিছু নতুন নিয়মকানুন জারি করেছে।

এই নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, সৌদি আরবের পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) এবং সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট থাকতে হবে। অন্যথায়, প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আসন্ন হজ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা স্পষ্ট করে বলেছে, যদি কোনো ব্যক্তি হজ পারমিট ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা দিতে হবে।

শুধু তাই নয়, এই কাজে সহায়তা করলেও রয়েছে এক লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানার বিধান। এখানেই শেষ নয়, যদি এই অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে সহায়তাকারীর নিজস্ব যানবাহনও আদালতের রায় অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সৌদি সরকার আরও কঠোর বার্তা দিয়েছে। যদি কোনো বিদেশি নাগরিক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় সৌদি আরবে অবস্থান করে অথবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী দশ বছর তাকে সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এই কঠোর নিয়মকানুন ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। জিলকদ মাসের ১ তারিখ, অর্থাৎ গত ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ, যা আগামী ১০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।

এই সময়ের মধ্যে হজের অনুমতি ছাড়া কেউ পবিত্র মক্কা নগরী বা এর আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে না। বিশেষ করে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হবে।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার কর্তৃক ঘোষিত সকল আইন ও বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা অপরিহার্য। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে।

প্রায় ৩৫ লাখ বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত এবং দেশটি আমাদের জন্য সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের উৎস। এমতাবস্থায়, এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে একটি সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

অনুমতি ছাড়া হজ নয়: ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কঠোর বার্তা

আপডেট সময় ০২:৫৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

হজ পালনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি মুসলমানদের জন্য ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুরোধ জানিয়েছে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার স্বার্থে, সকলের প্রতি হজ পারমিট (অনুমতি) ছাড়া হজ পালন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২ মে) তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্যটি বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি হজ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা অথবা সৌদি আরবের অন্য কোনো পবিত্র স্থানে অবস্থান না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, যারা হজ বিধিমালা অমান্য করে ভিজিট ভিসায় হজ পালনের চেষ্টা করবেন, তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করা, পরিবহন করা, সংরক্ষিত হজ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা করা এবং তাদের জন্য হোটেল বা বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকেও বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ বছর সৌদি সরকার হজযাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ আরও সহজ করতে, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে বেশ কিছু নতুন নিয়মকানুন জারি করেছে।

এই নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, সৌদি আরবের পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) এবং সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ পারমিট থাকতে হবে। অন্যথায়, প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আসন্ন হজ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা স্পষ্ট করে বলেছে, যদি কোনো ব্যক্তি হজ পারমিট ছাড়া হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা দিতে হবে।

শুধু তাই নয়, এই কাজে সহায়তা করলেও রয়েছে এক লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানার বিধান। এখানেই শেষ নয়, যদি এই অপরাধ প্রমাণিত হয়, তাহলে সহায়তাকারীর নিজস্ব যানবাহনও আদালতের রায় অনুযায়ী বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সৌদি সরকার আরও কঠোর বার্তা দিয়েছে। যদি কোনো বিদেশি নাগরিক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় সৌদি আরবে অবস্থান করে অথবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী দশ বছর তাকে সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

এই কঠোর নিয়মকানুন ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। জিলকদ মাসের ১ তারিখ, অর্থাৎ গত ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু করে জিলহজ মাসের ১৪ তারিখ, যা আগামী ১০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে।

এই সময়ের মধ্যে হজের অনুমতি ছাড়া কেউ পবিত্র মক্কা নগরী বা এর আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে না। বিশেষ করে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর সর্বোচ্চ নজরদারি রাখা হবে।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, হজের সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার কর্তৃক ঘোষিত সকল আইন ও বিধি-নিষেধ অনুসরণ করা অপরিহার্য। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় জড়িত রয়েছে।

প্রায় ৩৫ লাখ বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত এবং দেশটি আমাদের জন্য সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সের উৎস। এমতাবস্থায়, এমন কোনো কাজ করা উচিত নয় যা দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে একটি সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর।