কাশ্মীরে লুকিয়ে হামলাকারীরা: পেহেলগামের জঙ্গিদের ধরতে মরিয়া ভারত

- আপডেট সময় ০৩:০৫:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
- / ৬ বার পড়া হয়েছে
ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ফের উত্তপ্ত। জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ২৬ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পরেও রহস্যজনকভাবে অধরা রয়ে গেছে।
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে এই দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা ঘন জঙ্গলে আত্মগোপন করে গোপন যোগাযোগ ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ফলে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এনআইএ সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল দক্ষিণ কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর চালানো এই নারকীয় হামলায় জড়িত চারজন প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী সেনা ও স্থানীয় পুলিশের ব্যাপক অভিযান এড়িয়ে এখনো ওই দুর্গম এলাকাতেই লুকিয়ে আছে।
তদন্ত সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, সন্ত্রাসীরা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য ও অন্যান্য রসদ মজুদ রয়েছে। ঘন জঙ্গলের সুযোগ নিয়ে তারা এমন অত্যাধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যার জন্য বাইরের কোনো লজিস্টিক সহায়তার প্রয়োজন নেই।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, যার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে এনআইএ।
প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে, সন্ত্রাসীরা হামলার অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে পেহেলগামে পৌঁছেছিল এবং তাদের কাছে উন্নত যোগাযোগ সরঞ্জাম ছিল।
কাশ্মীরে দীর্ঘদিন কর্মরত অবসরপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল যশ মোর এনডিটিভিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত যোগাযোগ ডিভাইসগুলোতে কোনো সাধারণ সিম কার্ডের প্রয়োজন ছিল না। বরং, সেগুলোতে স্বল্প-পাল্লার এনক্রিপ্টেড ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা তাদের অবস্থান ট্র্যাক করা গোয়েন্দাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এমনকি, এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সন্ত্রাসীরা তিনটি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যা তাদের লুকিয়ে থাকতে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
হামলার কৌশলটিও ছিল ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনার ফসল। তিনজন সন্ত্রাসী বৈসারনের কাছাকাছি একটি গোপন আস্তানা থেকে অতর্কিতে বেরিয়ে এসে নিরীহ পর্যটকদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়, যখন তাদের চতুর্থ সহযোগী প্রয়োজনে সাহায্যের জন্য অপেক্ষায় ছিল।
পেহেলগামের এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা আরও বেড়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ভারত সরাসরি পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে এই হামলার জন্য দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। আন্তর্জাতিক মহলেও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের মদদ বন্ধ করার জন্য জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, এনআইএ জঙ্গিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ড্রোন এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক নজরদারি সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সম্ভাব্য সন্দেহভাজনদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে, ঘন জঙ্গল এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সন্ত্রাসীদের অবস্থান এখনো অজানা।