০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৩ মে ২০২৫

আফ্রিকার খনিজে নজর যুক্তরাষ্ট্রের: কঙ্গো ও রুয়ান্ডার সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৩:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

ইউক্রেনের যুদ্ধের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের নজর আফ্রিকার দিকে। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের পাশাপাশি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজসমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ চুক্তি করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাসসাদ বৌলোস সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন।

দোহায় অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মাসসাদ বৌলোস স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সেদিনই কঙ্গোর সঙ্গে একটি বিশাল খনিজ সম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

রুয়ান্ডার সঙ্গেও একই ধরনের, তবে কিছুটা ভিন্ন আকারের একটি চুক্তি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই চুক্তি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীরা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে নজিরবিহীন অগ্রগতি লাভ করছে।

এই অঞ্চলটি মূল্যবান ট্যান্টালাম ও সোনাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ এবং কয়েক দশক ধরে ভয়াবহ সংঘাতে জর্জরিত। যদিও রুয়ান্ডা বরাবরই এম২৩ বিদ্রোহীদের প্রতি তাদের সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

মাসসাদ বৌলোস আরও জানিয়েছেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর হোয়াইট হাউজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে শান্তিচুক্তির চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।

তবে, এই শান্তিচুক্তির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করতে আগ্রহী। যদি এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তবে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান কঙ্গোর খনিগুলোতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে শুরু করবে।

একই সাথে, রুয়ান্ডাতে খনিজ প্রক্রিয়াকরণ অবকাঠামো তৈরির জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই, আফ্রিকার এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী বেশ কিছু মার্কিন ও পশ্চিমা কোম্পানি জানিয়েছে যে দ্বিপাক্ষিক খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই তারা তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবে।

তবে, হোয়াইট হাউজে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাজনিত শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং এম২৩ বিদ্রোহীদের প্রতি সকল প্রকার সমর্থন বন্ধ করা। পাশাপাশি, কঙ্গো সরকারকেই তাদের দেশের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো নিয়ে রুয়ান্ডার যে নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে, তা সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।

চুক্তির অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মাসসাদ বৌলোস। এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ফ্রান্স এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে টোগো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইউক্রেনের পর আফ্রিকা – যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ কতটা সফল হবে? কঙ্গো ও রুয়ান্ডার দীর্ঘদিনের সংঘাত কি সত্যিই শেষ হবে? আর বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ চুক্তিই বা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আফ্রিকার খনিজে নজর যুক্তরাষ্ট্রের: কঙ্গো ও রুয়ান্ডার সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি

আপডেট সময় ০৩:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫

ইউক্রেনের যুদ্ধের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের নজর আফ্রিকার দিকে। কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাত নিরসনের পাশাপাশি এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজসমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ চুক্তি করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফ্রিকা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাসসাদ বৌলোস সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছেন।

দোহায় অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মাসসাদ বৌলোস স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সেদিনই কঙ্গোর সঙ্গে একটি বিশাল খনিজ সম্পদ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

রুয়ান্ডার সঙ্গেও একই ধরনের, তবে কিছুটা ভিন্ন আকারের একটি চুক্তি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এই চুক্তি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে যখন রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহীরা কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে নজিরবিহীন অগ্রগতি লাভ করছে।

এই অঞ্চলটি মূল্যবান ট্যান্টালাম ও সোনাসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ এবং কয়েক দশক ধরে ভয়াবহ সংঘাতে জর্জরিত। যদিও রুয়ান্ডা বরাবরই এম২৩ বিদ্রোহীদের প্রতি তাদের সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

মাসসাদ বৌলোস আরও জানিয়েছেন, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর হোয়াইট হাউজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে শান্তিচুক্তির চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।

তবে, এই শান্তিচুক্তির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি দেশের সঙ্গে পৃথকভাবে অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পন্ন করতে আগ্রহী। যদি এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়িত হয়, তবে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান কঙ্গোর খনিগুলোতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে শুরু করবে।

একই সাথে, রুয়ান্ডাতে খনিজ প্রক্রিয়াকরণ অবকাঠামো তৈরির জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে। ইতিমধ্যেই, আফ্রিকার এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী বেশ কিছু মার্কিন ও পশ্চিমা কোম্পানি জানিয়েছে যে দ্বিপাক্ষিক খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেই তারা তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবে।

তবে, হোয়াইট হাউজে বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তাজনিত শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং এম২৩ বিদ্রোহীদের প্রতি সকল প্রকার সমর্থন বন্ধ করা। পাশাপাশি, কঙ্গো সরকারকেই তাদের দেশের মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো নিয়ে রুয়ান্ডার যে নিরাপত্তা উদ্বেগ রয়েছে, তা সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।

চুক্তির অগ্রগতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মাসসাদ বৌলোস। এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ফ্রান্স এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে টোগো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইউক্রেনের পর আফ্রিকা – যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ কতটা সফল হবে? কঙ্গো ও রুয়ান্ডার দীর্ঘদিনের সংঘাত কি সত্যিই শেষ হবে? আর বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ চুক্তিই বা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? সময়ই এর উত্তর দেবে।