‘প্রিয়তমা আমার’: নিহত লাদেনের গোপন প্রেমপত্র

- আপডেট সময় ০৪:৪৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ মে ২০২৫
- / ৬ বার পড়া হয়েছে
২০১১ সালের ২ মে, বিশ্ব জানতে পারে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন আর নেই। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে এক গোপন অভিযানে মার্কিন সেনারা তাকে হত্যা করে। সেই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বহু ব্যক্তিগত নথি।
বেশ কয়েক বছর পর, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয় সেই গোপন নথিপত্রের কিছু অংশ প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘বিন লাদেনস বুকশেলফ’।
সেই অমূল্য ভাণ্ডারের মাঝে পাওয়া যায় একটি ব্যতিক্রমী চিঠি—একটি প্রেমপত্র।
২০০৮ সালে ওসামা বিন লাদেন তার এক স্ত্রীকে লিখেছিলেন, যার নাম সম্ভবত অমল আল-সাবাহ। ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন অমল।
যখন তাদের বিয়ে হয়, অমলের বয়স ছিল মাত্র ১৮, আর লাদেন তখন ৪৩ বছরের একজন প্রৌঢ়।
চিঠির শুরুতেই লাদেন তার স্ত্রীকে সম্বোধন করেছিলেন ‘প্রিয়তমা’ বলে। সেই চিঠিতে তিনি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন।
তিনি লিখেছিলেন, তার মেয়েদের যেন ‘ভালো মানুষদের’ সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়, যারা তাদের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করবে। অন্যদিকে, ছেলেদের জন্য তার প্রত্যাশা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—তাদের যেন আল্লাহর পথে, জিহাদের ময়দানে পাঠানো হয়।
লাদেনের ঘনিষ্ঠ দেহরক্ষীদের একজন ছিলেন আবু জিনদাল। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লাদেনের মোট ১১ জন পুত্রসন্তান ছিল।
তবে, কন্যা সন্তানের সঠিক সংখ্যা নিয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, আনুমানিক ৭ জনের মতো হবে। জিনদাল আরও জানান, লাদেনের কিছু সন্তান তাদের বাবার পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন বেছে নিয়েছিল।
কিন্তু সেই ব্যক্তিগত চিঠিতে লাদেন শুধু তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েই লেখেননি, বরং তার স্ত্রীর প্রতি গভীর আস্থা ও ভালোবাসাও প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি লেখেন, ‘প্রিয়তমা আমার, তোমার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমার এত ভালোবাসা তোমার প্রতি এই বিশ্বাস থেকেই যে, তুমি আমার সন্তানদের কখনো বিপদগামী হতে দেবে না।’
এই কথাগুলো যেন এক নিষ্ঠুর নেতার ভেতরের অন্য এক মানুষের পরিচয় দেয়—একজন স্বামী ও পিতা, যার মনে ছিল ভালোবাসা এবং তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ।
‘বিন লাদেনস বুকশেলফ’ শুধু একটি প্রেমপত্রই ধারণ করেনি, বরং লাদেনের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, তার পারিবারিক জীবন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষার এক দুর্লভ চিত্রও তুলে ধরে।
এই চিঠি যেন সেই কুখ্যাত ব্যক্তির জীবনের এক অপ্রত্যাশিত দিক উন্মোচন করে, যা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা ছিল।
ইতিহাসের এক কুখ্যাত অধ্যায়ের সমাপ্তির পর, এই ব্যক্তিগত চিঠি যেন এক ধূসর রঙের ছবি—যেখানে একজন নিষ্ঠুর নেতার হৃদয়ের গভীরে লুকানো ছিল প্রেম ও প্রত্যাশার এক অন্য জগৎ।