০৪:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫

সাগর-রুনি হত্যায় ২ জন জড়িত, ডিএনএতেই আটকে আছে রহস্যের জট!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:৪১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
  • / ২ বার পড়া হয়েছে

থামছে না যেন সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্যের ঘনঘটা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন? নতুন তথ্য বলছে, না! তাদের খুন করা হয়েছে। আর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল দু’জন দুষ্কৃতকারী।

সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্সের এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। তবে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে ডিএনএ-র অস্পষ্টতার কারণে, যা এখনও পর্যন্ত হত্যাকারীদের শনাক্তকরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আদালতে পেশ করা এই প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, দীর্ঘ তদন্তেও দাম্পত্য কলহ, চুরি কিংবা পেশাগত শত্রুতার মতো কোনো সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা এই হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিতে পারে। এমনকি ভিসেরা রিপোর্টেও মেলেনি কোনো প্রকার চেতনানাশক বা বিষের অস্তিত্ব।

প্রতিবেদনের আরও ভয়াবহ তথ্য অনুযায়ী, রান্নাঘরের ছুরি ও বটি দিয়েই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সাগর ও রুনিকে। আঘাতের পরেও তারা বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন। তদন্তে আরও জানা গেছে, ঘটনার আগে বাসায় বাইরের কেউ ছিল না এবং জোর করে কেউ প্রবেশও করেনি।

দীর্ঘ সময় ধরে র‌্যাবের তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র্যাবের কাছ থেকে এই স্পর্শকাতর মামলার তদন্তভার সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিলেও, তারা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে, এরই মধ্যে নতুন করে ৭ জন সাংবাদিকসহ মোট ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে টাস্কফোর্স।

সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের সময়কাল সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যেই খুন হন সাগর ও রুনি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছে, প্রথমে সাগর এবং পরে রুনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। মর্মান্তিক সেই রাতে তাদের সন্তান মেঘ তাদের সঙ্গেই একই খাটে ঘুমিয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভবত সাগর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন – এমন আশঙ্কায় তার হাত-পা বাঁধা হয়েছিল। তবে রুনি নারী হওয়ায় তাকে দুর্বল ভেবে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন মনে করেনি হত্যাকারীরা।

‘ব্লাড প্যাটার্ন’ বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, রুনি প্রথমে মারা যান এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে টাস্কফোর্স নিশ্চিত করেছে যে সাগরের মৃত্যু হয় পরে।

হাইকোর্টে পেশ করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে ঘটনার পরের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উঠে এসেছে। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই, গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পদচারণায় বহু মূল্যবান আলামত নষ্ট হয়ে যায়।

তবে রান্নাঘরের বারান্দার একটি ভাঙা অংশ – যার পরিমাপ ছিল সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চি – সেটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল এবং তা দিয়ে সহজেই কেউ প্রবেশ বা বের হতে পারত। যদিও সেখান থেকে কোনো পূর্ণাঙ্গ পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, যদি নমুনায় দুই বা তিনজনের ডিএনএ পাওয়া যেত, তাহলে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে, নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ পাওয়ায় তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর সেই সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন এবং রুনি কাজ করতেন এটিএন বাংলায়।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

সাগর-রুনি হত্যায় ২ জন জড়িত, ডিএনএতেই আটকে আছে রহস্যের জট!

আপডেট সময় ১২:৪১:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

থামছে না যেন সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্যের ঘনঘটা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি কি সত্যিই আত্মহত্যা করেছিলেন? নতুন তথ্য বলছে, না! তাদের খুন করা হয়েছে। আর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল দু’জন দুষ্কৃতকারী।

সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত টাস্কফোর্সের এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। তবে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে ডিএনএ-র অস্পষ্টতার কারণে, যা এখনও পর্যন্ত হত্যাকারীদের শনাক্তকরণের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে আদালতে পেশ করা এই প্রতিবেদনে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, দীর্ঘ তদন্তেও দাম্পত্য কলহ, চুরি কিংবা পেশাগত শত্রুতার মতো কোনো সুস্পষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা এই হত্যাকাণ্ডকে ন্যায্যতা দিতে পারে। এমনকি ভিসেরা রিপোর্টেও মেলেনি কোনো প্রকার চেতনানাশক বা বিষের অস্তিত্ব।

প্রতিবেদনের আরও ভয়াবহ তথ্য অনুযায়ী, রান্নাঘরের ছুরি ও বটি দিয়েই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল সাগর ও রুনিকে। আঘাতের পরেও তারা বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে ছিলেন। তদন্তে আরও জানা গেছে, ঘটনার আগে বাসায় বাইরের কেউ ছিল না এবং জোর করে কেউ প্রবেশও করেনি।

দীর্ঘ সময় ধরে র‌্যাবের তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায়, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে র্যাবের কাছ থেকে এই স্পর্শকাতর মামলার তদন্তভার সরিয়ে নিয়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিজ্ঞ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিলেও, তারা এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তবে, এরই মধ্যে নতুন করে ৭ জন সাংবাদিকসহ মোট ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে টাস্কফোর্স।

সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া টাস্কফোর্সের অগ্রগতি প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের সময়কাল সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যেই খুন হন সাগর ও রুনি। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছে, প্রথমে সাগর এবং পরে রুনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। মর্মান্তিক সেই রাতে তাদের সন্তান মেঘ তাদের সঙ্গেই একই খাটে ঘুমিয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সম্ভবত সাগর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন – এমন আশঙ্কায় তার হাত-পা বাঁধা হয়েছিল। তবে রুনি নারী হওয়ায় তাকে দুর্বল ভেবে তার হাত-পা বাঁধার প্রয়োজন মনে করেনি হত্যাকারীরা।

‘ব্লাড প্যাটার্ন’ বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, রুনি প্রথমে মারা যান এবং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে টাস্কফোর্স নিশ্চিত করেছে যে সাগরের মৃত্যু হয় পরে।

হাইকোর্টে পেশ করা টাস্কফোর্সের রিপোর্টে ঘটনার পরের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও উঠে এসেছে। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই, গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়দের পদচারণায় বহু মূল্যবান আলামত নষ্ট হয়ে যায়।

তবে রান্নাঘরের বারান্দার একটি ভাঙা অংশ – যার পরিমাপ ছিল সাড়ে ১৪ ইঞ্চি ও সাড়ে ৮ ইঞ্চি – সেটি সম্পূর্ণ নতুন ছিল এবং তা দিয়ে সহজেই কেউ প্রবেশ বা বের হতে পারত। যদিও সেখান থেকে কোনো পূর্ণাঙ্গ পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, সিআইডির সঙ্গে ডিএনএ বিশ্লেষণ করে টাস্কফোর্স জানিয়েছে, যদি নমুনায় দুই বা তিনজনের ডিএনএ পাওয়া যেত, তাহলে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে, নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের ডিএনএ পাওয়ায় তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর সেই সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে কর্মরত ছিলেন এবং রুনি কাজ করতেন এটিএন বাংলায়।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।