ঢাকা ০২:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৭:১৮:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

সরকার আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল প্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে।

এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত।

জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অন্তর্ভুক্ত সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই দল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত করা প্রয়োজন বলে সরকার মনে করে।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, মিছিল, সভা-সমাবেশ, এবং সম্মেলনসহ সকল প্রকার সাংগঠনিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা, গুম, খুন, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

এছাড়াও, দলটির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

সরকার আরও জানায়, এসব অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের বিভিন্ন ফৌজদারি আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বিচারাধীন এসব মামলার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক তৈরি এবং বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে গত ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উস্কানিমূলক মিছিল, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং বিদেশে পলাতক তাদের নেতাসহ অন্যান্য কর্মীদের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, এবং দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভয় সৃষ্টি করে বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এই পরিস্থিতিতে, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো সরকার

আপডেট সময় ০৭:১৮:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

সরকার আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল প্রকার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশ করে।

এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি জানান, রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের উপর ন্যস্ত।

জারি করা প্রজ্ঞাপনে সরকার স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অন্তর্ভুক্ত সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই দল এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত করা প্রয়োজন বলে সরকার মনে করে।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার, মিছিল, সভা-সমাবেশ, এবং সম্মেলনসহ সকল প্রকার সাংগঠনিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর হামলা, গুম, খুন, নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে সারাদেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।

এছাড়াও, দলটির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ই জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুম, খুন, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

সরকার আরও জানায়, এসব অপরাধের অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের বিভিন্ন ফৌজদারি আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বিচারাধীন এসব মামলার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, জনমনে আতঙ্ক তৈরি এবং বাংলাদেশের সংহতি, জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার উদ্দেশ্যে গত ৫ই আগস্টের পর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, উস্কানিমূলক মিছিল, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ এবং বিদেশে পলাতক তাদের নেতাসহ অন্যান্য কর্মীদের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে অপরাধমূলক বক্তব্য প্রদান ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষতিসাধনের চেষ্টা চালিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, এবং দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী ও সাক্ষীদের মনে ভয় সৃষ্টি করে বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং জনমনে ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনের মতো বেআইনি কার্যকলাপ ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এই পরিস্থিতিতে, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর অধীনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করে।