অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রশ্ন
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কি সঠিক পথ?

- আপডেট সময় ০২:২৩:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মৌলিক অধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ জনসাধারণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
বুধবার (২১ মে) প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ এই গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। তারা বলছে, বিচারব্যবস্থা সংস্কারের পরিবর্তে বর্তমান সরকার যেন সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগপন্থীদের দমন নীতিতে এগোচ্ছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজই হলো একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করা।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ১২ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করে আওয়ামী লীগের সভা, সমাবেশ, প্রকাশনা ও অনলাইন প্রচার কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এইচআরডব্লিউ মনে করছে, আগের সরকারের আমলেও দমনমূলক নীতি ছিল, কিন্তু বর্তমান সরকারের এই সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের এক নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ঘটে যাওয়া গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, বিশেষ করে গুমের মতো বিষয়গুলো নিয়েও জোর দিয়েছে। তারা বলছে, সেসব অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি, গুম প্রতিরোধে প্রস্তাবিত আইনও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, “গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রক্ষায় যে কাঠামো থাকা দরকার, খসড়া আইনে তা নেই।” এটি একটি হতাশাজনক চিত্র, যেখানে নতুন সরকার আসার পরও পূর্ববর্তী সরকারের গুরুতর অন্যায়ের বিচার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকারের নিষেধাজ্ঞা এবং নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত। এইচআরডব্লিউ হতাশা প্রকাশ করে বলেছে, সরকার জানিয়েছে, দলটির নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া অনেক বছর ধরে চলতে পারে, যা কার্যত একটি ঐতিহাসিক ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার শামিল।
সংস্থাটি মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে থেকেই সক্রিয় আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিপুল সমর্থকগোষ্ঠীর কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করে সরকার জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করছে। দলটির নিবন্ধন বাতিলের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। এটি কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়, বরং দেশে বিরোধী মত দমনের পুরনো ধারাকেই বহাল রাখার প্রতিফলন।
এইচআরডব্লিউ অবশ্য আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঘটে যাওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার দাবির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে তারা স্পষ্ট করে বলছে, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না।