বিদায় বেলায় ইলন মাস্কের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

- আপডেট সময় ১২:৩৪:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ২৬১ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন থেকে বিদায় জানিয়েছেন। শুক্রবার (৩০ মে) মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প; এ সময় মাস্কও উপস্থিত ছিলেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মাস্কের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ইলন এক কথায় দুর্দান্ত। তিনি প্রশাসনে আসার পর অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন এবং তিনি ছিলেন বলেই আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রশাসনে ব্যাপক ও ফলপ্রসূ পরিবর্তন আনতে পেরেছি। তিনি না থাকলে হয়তো এই পরিবর্তন আনতে কয়েক প্রজন্ম লেগে যেতো।
আজ তিনি বিদায় নিচ্ছেন; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে এটি সত্যিকারের বিদায় নয়। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও কোনো না কোনোভাবে আমাদের সংস্পর্শে থাকবেন। এখনও তার অনেক কিছু করার আছে।
ইলন মাস্ক ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারাভিযানে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন। নির্বাচনে জয়ের পর মাস্ককে নিজের পরামর্শক ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর মাস্ককে নবগঠিত সরকারি বিভাগ বা মন্ত্রণালয় ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)-এর প্রধান করেন ট্রাম্প। এই বিভাগের প্রধান কাজ ছিল সরকারি ব্যয় সংকোচন এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি।
মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশি সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সহায়তা প্রদান স্থগিত করায় দেশের ভেতরেও সমালোচনায় বিদ্ধ হতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন।
মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততা সৃষ্টির অবস্থা দেখা দেয়। মাস্ক প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন।
নাগরিকদের কর মওকুফ এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি সংক্রান্ত ওই বিলটি স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যে তিনি একটি ‘বড় ও সুন্দর’ বিলে সাক্ষর করেছেন। কিন্তু এর পরের দিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক সেই বিলের সমালোচনা করে বলেন, এটা একটা বিশাল খরচের বিল। আমরা সরকারের খরচ বাঁচাতে, অপ্রয়োজনীয় খরচে কাটছাঁট করতে এতোদিন ধরে ডজ-এর আওতায় যা যা কাজ করলাম, এই বিল সেসব ব্যর্থ করে দেবে। আর আমার মনে হয়, একটা বিল হয় বড় হতে পারে, অথবা সুন্দর। দুটো একসঙ্গে হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।
পরে পৃথক এক সাক্ষাৎকারে ওয়াশিংটন পোস্টকে মাস্ক বলেন, তিনি তার পুরোনো কাজে ফিরে যেতে চান এবং ব্যবসায় মন দিতে চান।
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে মাস্ক বিশ্বের তিনটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির মালিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স, বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাাণকারী প্রতিষ্ঠান টেসলা এবং নভোযান এবং মহাকাশ গবেষণা কাজে ব্যবহারযোগ্য সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী কোম্পানি স্পেসএক্স।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মাস্ক বলেন, আমি মনে করি, ডজ টিম তার গত কয়েক মাসের কাজে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকবে।
সূত্র : এএফপি