৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি

- আপডেট সময় ০২:০০:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
- / ২৬৯ বার পড়া হয়েছে
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির আওতায় এখন পর্যন্ত ৩১ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। এ পর্যন্ত ফেরত আসা ৩১ জনের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ এবং একজন নারী। এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন মামলায় হেরে গিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন, অনেকে আবার বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্তও ছিলেন।
এদের মধ্যে তিনজনকে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ নিরাপত্তাসহ ঢাকায় পৌঁছে দেন। বাকি বাংলাদেশিদের সাধারণ যাত্রীর মতো পাঠানো হয়। সর্বশেষ পাঁচজনকে নিয়ে একটি চার্টার্ড ফ্লাইট গত শনিবার ঢাকায় পৌঁছায়, যা নেপাল হয়ে আসে।
ফেরত আসা একজন, নোয়াখালীর শাহাদত হোসেন জানান, তাকে গত ৯ মার্চ ফেরত পাঠানো হয়। তিনি বলেন, “আমাকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে পাঠানো হয়। কোনো অসম্মানজনক ব্যবহার করা হয়নি। হাতকড়াও পরানো হয়নি।”
শাহাদত জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণ অ্যাসাইলাম চেয়েছিলেন, কিন্তু আবেদন বাতিল হওয়ায় তাকে ফেরত পাঠানো হয়। তিনি মাত্র ৯ মাস আগে নিউইয়র্কে যান।
পুলিশের বিশেষ শাখার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ সরকার শুরু থেকেই চেয়েছে যেন দেশের নাগরিকদের সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো হয়। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তোলা হয়। বিভিন্ন দেশে নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সময় হাতকড়া পরানোয় যে সমালোচনা হয়েছিল, সে অভিজ্ঞতার কারণে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অনেক দেশের নাগরিকদের সামরিক বিমানে করে ফেরত পাঠানো হলেও বাংলাদেশিদের সাধারণ বা চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু অবৈধ অভিবাসী নয়, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ভারতীয় নাগরিকদের সামরিক বিমানে করে হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা জানান, কতজন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন, তার নির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই। তবে যাদের শনাক্ত করা হয়, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্টদের তথ্য সংগ্রহ করে তা ঢাকায় পাঠায়। পরে পুলিশের বিশেষ শাখা তাদের নথিপত্র যাচাই করে এবং ইমিগ্রেশন শেষ করে হস্তান্তর করে। শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাদের নাম রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে আগেই অবহিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস, এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক পত্রও দেওয়া হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পররাষ্ট্র, আইন ও অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।