আকাশছোঁয়া সোনার দাম! দুবাইয়ের চেয়েও বেশি কেন বাংলাদেশে?

- আপডেট সময় ১২:৩৮:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
দেশের বাজারে সোনার দাম যেন লাগামছাড়া। গত চার মাসে ভরিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বেড়ে, বর্তমানে তা ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকায় ঠেকেছে (২২ ক্যারেট)।
যদিও সম্প্রতি সামান্য কমেছে, তবে এই আকাশছোঁয়া দাম মধ্য ও নিম্নবিত্তের ক্রেতাদের ফেলেছে চরম বিপাকে। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, সোনার গয়নার বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন বাংলাদেশে সোনার দাম দুবাই বা ভারতের মতো অন্যান্য দেশের চেয়ে এত বেশি?
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) দেশে সোনার দাম নির্ধারণ করে থাকে। তাদের ভাষ্য, বিশ্ববাজারে সোনার দামের ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তারা দেশের দাম নির্ধারণ করেন এবং নিয়মিত নতুন দাম ঘোষণা করেন।
তবে, বিশদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশের সোনার দাম অনেকটাই বেশি। উদাহরণস্বরূপ, দুবাই জুয়েলারি গ্রুপের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, গতকাল দুবাইতে ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি ছিল প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা (৪ হাজার ২১৭ দিরহাম)।
অন্যদিকে, ভারতের বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, সেখানে একই মানের সোনার ভরি ছিল প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৮ টাকা (১ লাখ ৬ হাজার ৯৫৯ রুপি)।
অর্থাৎ, দুবাইয়ের চেয়ে বাংলাদেশে সোনার দাম ভরিতে প্রায় ২৯ হাজার ৫০০ টাকা এবং ভারতের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বেশি! উল্লেখ্য, এই দামের সাথে উভয় দেশেই অলংকার তৈরির মজুরি ও ভ্যাট যোগ হবে। বাংলাদেশেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
কিন্তু এই আকাশ-পাতাল পার্থক্যের কারণ কী?
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে সোনা আমদানি প্রায় হয়ই না। মূলত, বিদেশফেরত যাত্রীরাই সোনার প্রধান উৎস। ‘যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬’ অনুযায়ী, একজন যাত্রী ভরিপ্রতি ৪ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ ভরি সোনা আনতে পারেন। এই শুল্ক যোগ করার পরেও দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দাম বেশি। ধারণা করা হয়, দেশের সোনার চাহিদার একটি বড় অংশ পুরোনো সোনা এবং অবৈধ পথে আসা সোনার মাধ্যমেই পূরণ হয়।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি মাসুদুর রহমান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘তেজাবি (খাঁটি) সোনার দামের সঙ্গে সামান্য মুনাফা যোগ করে জুয়েলারি সোনার দর নির্ধারণ করা হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে সরকার ও ব্যবসায়ীরাও যুক্ত।’ তিনি আরও মনে করেন, যদি সোনা বেচাকেনায় ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ’ চালু করা যায়, তাহলে অন্যান্য দেশের সাথে দামের এই পার্থক্য অনেকাংশে কমে আসবে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে শেয়ারের মতো পণ্য কেনাবেচা করা হয়, তবে পণ্য সরাসরি নয়, বরং কাগজি বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৯৯৩ গুণ। বর্তমানে প্রতি ভরি সোনার দাম প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬ টাকা। এমনকি গত ২৩শে এপ্রিল, দাম ১ লাখ ৭৮ হাজারে পৌঁছেছিল, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
জুয়েলার্স সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম মনে করেন, পরিস্থিতির নতুন করে অবনতি না ঘটলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সোনার দাম কিছুটা কমতে পারে।