ঢাকা ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উলবাকিয়ার নতুন সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

ডেঙ্গু আজ আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। কিন্তু আশার কথা, উলবাকিয়া নামক একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। আসুন দেখে নেই কীভাবে উলবাকিয়া সংক্রমিত মশা আমাদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে।

উলবাকিয়া কী?

উলবাকিয়া একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষ বা অন্য প্রাণীদের ক্ষতি করে না। এটি এডিস ইজিপ্টি মশার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মশাবাহিত রোগ, যেমন ডেঙ্গু, জিকা বা চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এই মশাগুলোকে ‘ভালো মশা’ বলা হয়, কারণ এরা আমাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং নিরাপদে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

কীভাবে কাজ করে উলবাকিয়া: উলবাকিয়ার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমত, উলবাকিয়া সংক্রমিত পুরুষ মশা পরিবেশে ছাড়া হয়। এরা স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে ডিম ফোটাতে পারে না, ফলে মশার সংখ্যা কমে যায়।

দ্বিতীয়ত, প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী উলবাকিয়া মশা পরিবেশে ছাড়া হয়। এই স্ত্রী মশারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মে উলবাকিয়া বহন করে, যা ভাইরাস সংক্রমণ কমায়।

বিশ্বব্যাপী সাফল্য : এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফল হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ৯৬ শতাংশ কমেছে। ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া গেছে। এই গবেষণার পেছনে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কিউআইএমআর বার্গহোফার, আইসিডিডিআর,বি, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র মতো প্রতিষ্ঠান। তাদের গবেষণা বিখ্যাত জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশে সম্ভাবনা : বাংলাদেশে আবহাওয়া পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। প্রচলিত কীটনাশক আর কার্যকর হচ্ছে না, কারণ মশার মধ্যে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে উলবাকিয়া একটি নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব।

আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “এটি জেনেটিক পরিবর্তন নয়, বরং প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার। এটি নিরাপদ এবং আমাদের দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা।”

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। মাঠপর্যায়ে আরও পরীক্ষার পর বড় পরিসরে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে।” গবেষক হাসান মোহাম্মদ আল আমিন জানান, “পরীক্ষাগারে ফলাফল আশাব্যঞ্জক। তবে বাস্তবায়নের জন্য সতর্ক পরিকল্পনা প্রয়োজন।”

উলবাকিয়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ এবং কার্যকর। আমাদের দেশে এই পদ্ধতি সফল হলে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উলবাকিয়ার নতুন সম্ভাবনা

আপডেট সময় ১২:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

ডেঙ্গু আজ আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। কিন্তু আশার কথা, উলবাকিয়া নামক একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। আসুন দেখে নেই কীভাবে উলবাকিয়া সংক্রমিত মশা আমাদের ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করছে।

উলবাকিয়া কী?

উলবাকিয়া একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া, যা মানুষ বা অন্য প্রাণীদের ক্ষতি করে না। এটি এডিস ইজিপ্টি মশার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মশাবাহিত রোগ, যেমন ডেঙ্গু, জিকা বা চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এই মশাগুলোকে ‘ভালো মশা’ বলা হয়, কারণ এরা আমাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে এবং নিরাপদে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

কীভাবে কাজ করে উলবাকিয়া: উলবাকিয়ার মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রথমত, উলবাকিয়া সংক্রমিত পুরুষ মশা পরিবেশে ছাড়া হয়। এরা স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হলে ডিম ফোটাতে পারে না, ফলে মশার সংখ্যা কমে যায়।

দ্বিতীয়ত, প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে পুরুষ ও স্ত্রী উলবাকিয়া মশা পরিবেশে ছাড়া হয়। এই স্ত্রী মশারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মে উলবাকিয়া বহন করে, যা ভাইরাস সংক্রমণ কমায়।

বিশ্বব্যাপী সাফল্য : এই পদ্ধতি ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফল হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ৯৬ শতাংশ কমেছে। ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুরের মতো দেশেও ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত সাফল্য পাওয়া গেছে। এই গবেষণার পেছনে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কিউআইএমআর বার্গহোফার, আইসিডিডিআর,বি, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র মতো প্রতিষ্ঠান। তাদের গবেষণা বিখ্যাত জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশে সম্ভাবনা : বাংলাদেশে আবহাওয়া পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। প্রচলিত কীটনাশক আর কার্যকর হচ্ছে না, কারণ মশার মধ্যে এর প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে উলবাকিয়া একটি নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব।

আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, “এটি জেনেটিক পরিবর্তন নয়, বরং প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার। এটি নিরাপদ এবং আমাদের দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা।”

আইসিডিডিআর,বি’র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, “আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। মাঠপর্যায়ে আরও পরীক্ষার পর বড় পরিসরে এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে।” গবেষক হাসান মোহাম্মদ আল আমিন জানান, “পরীক্ষাগারে ফলাফল আশাব্যঞ্জক। তবে বাস্তবায়নের জন্য সতর্ক পরিকল্পনা প্রয়োজন।”

উলবাকিয়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একটি বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটি পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ এবং কার্যকর। আমাদের দেশে এই পদ্ধতি সফল হলে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।