ঢাকা ০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ডায়াবেটিসের নতুন রূপ ‘মোডি’, শিশু ও কম বয়সীরাই বেশি ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৫:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

ডায়াবেটিস নিয়ে নতুন একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। এতদিন টাইপ ১, টাইপ ২ এবং এমনকি টাইপ ৫ ডায়াবেটিস নিয়ে আলোচনা চলছিল। এবার বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসের একটি নতুন রূপের সন্ধান পেয়েছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ম্যাচুরিটি-অনসেট ডায়াবেটিস অফ দ্য ইয়ং’ বা সংক্ষেপে ‘মোডি’।

গবেষকদের মতে, এই নতুন ধরনের ডায়াবেটিসে মূলত শিশু ও কম বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি, নবজাতকের শরীরেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।

চেন্নাইয়ের ‘মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (এমডিআরএফ) এবং আমেরিকার ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’-এর গবেষকরা যৌথভাবে এই রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের দাবি, ‘মোডি’ অত্যন্ত বিরল একটি রোগ এবং এটি বংশগত।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, জিনের বিন্যাসের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণেই এই ‘মোডি’ ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত ‘ডায়াবেটিস’ নামক একটি মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে ভারত ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ‘এবিসিসি৮’ নামক একটি জিনের গঠনে ত্রুটি দেখা দিলেই এই ডায়াবেটিস হতে পারে।

‘এবিসিসি৮’ জিনটি অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে যদি এই জিনে রাসায়নিক পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে, তাহলে এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং জিনটির গঠনেও পরিবর্তন আসে।

এর ফলে শরীরের ভেতরের কোষগুলো বিদ্রোহ করে, যা ‘অটোইমিউন’ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘মোডি’ ডায়াবেটিসও তেমনই একটি রোগ, যাকে ‘মোনোজেনিক ডায়াবেটিস’-ও বলা হয়। এটি খুবই কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেখা যায় এবং বংশ পরম্পরায় ছড়াতে পারে।

এমডিআরএফ-এর গবেষক রাধা ভেঙ্কটেশন জানিয়েছেন, এই রোগ শৈশবেই প্রকাশ পায়। যেহেতু এটি জিনগত পরিবর্তনের কারণে হয়, তাই এর লক্ষণ টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের থেকে ভিন্ন। ফলে রোগটি সহজে ধরা পড়ে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে পরিবর্তিত জিন সন্তানের মধ্যে এসে এই বিরল রোগের কারণ হয়।

শিশুদের শরীরে এই রোগ দেখা দিলে, প্রাথমিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে, যা ‘কনজেনিটাল হাইপারইনসুলিনিজ়ম’ (সিএইচআই) নামে পরিচিত।

তবে শিশু যত বড় হতে থাকে, ততই তার রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং ৩০ বছর বয়সের আগেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

‘মোডি’ ডায়াবেটিসের আরও বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন ‘মোডি ১’, ‘মোডি ৩’, ‘মোডি ১২’ ইত্যাদি। এই প্রতিটি ভাগ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিরল এই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য উপযুক্ত ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ডায়াবেটিসের নতুন রূপ ‘মোডি’, শিশু ও কম বয়সীরাই বেশি ঝুঁকিতে

আপডেট সময় ০৫:০০:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ডায়াবেটিস নিয়ে নতুন একটি উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। এতদিন টাইপ ১, টাইপ ২ এবং এমনকি টাইপ ৫ ডায়াবেটিস নিয়ে আলোচনা চলছিল। এবার বিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসের একটি নতুন রূপের সন্ধান পেয়েছেন, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ম্যাচুরিটি-অনসেট ডায়াবেটিস অফ দ্য ইয়ং’ বা সংক্ষেপে ‘মোডি’।

গবেষকদের মতে, এই নতুন ধরনের ডায়াবেটিসে মূলত শিশু ও কম বয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি, নবজাতকের শরীরেও এই রোগ দেখা দিতে পারে।

চেন্নাইয়ের ‘মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ (এমডিআরএফ) এবং আমেরিকার ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’-এর গবেষকরা যৌথভাবে এই রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাদের দাবি, ‘মোডি’ অত্যন্ত বিরল একটি রোগ এবং এটি বংশগত।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, জিনের বিন্যাসের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণেই এই ‘মোডি’ ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত ‘ডায়াবেটিস’ নামক একটি মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সেখানে ভারত ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ‘এবিসিসি৮’ নামক একটি জিনের গঠনে ত্রুটি দেখা দিলেই এই ডায়াবেটিস হতে পারে।

‘এবিসিসি৮’ জিনটি অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে যদি এই জিনে রাসায়নিক পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটে, তাহলে এর স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয় এবং জিনটির গঠনেও পরিবর্তন আসে।

এর ফলে শরীরের ভেতরের কোষগুলো বিদ্রোহ করে, যা ‘অটোইমিউন’ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘মোডি’ ডায়াবেটিসও তেমনই একটি রোগ, যাকে ‘মোনোজেনিক ডায়াবেটিস’-ও বলা হয়। এটি খুবই কম সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেখা যায় এবং বংশ পরম্পরায় ছড়াতে পারে।

এমডিআরএফ-এর গবেষক রাধা ভেঙ্কটেশন জানিয়েছেন, এই রোগ শৈশবেই প্রকাশ পায়। যেহেতু এটি জিনগত পরিবর্তনের কারণে হয়, তাই এর লক্ষণ টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের থেকে ভিন্ন। ফলে রোগটি সহজে ধরা পড়ে না।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে পরিবর্তিত জিন সন্তানের মধ্যে এসে এই বিরল রোগের কারণ হয়।

শিশুদের শরীরে এই রোগ দেখা দিলে, প্রাথমিকভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে, যা ‘কনজেনিটাল হাইপারইনসুলিনিজ়ম’ (সিএইচআই) নামে পরিচিত।

তবে শিশু যত বড় হতে থাকে, ততই তার রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে এবং ৩০ বছর বয়সের আগেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। তখন রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

‘মোডি’ ডায়াবেটিসের আরও বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন ‘মোডি ১’, ‘মোডি ৩’, ‘মোডি ১২’ ইত্যাদি। এই প্রতিটি ভাগ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিরল এই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য উপযুক্ত ওষুধ বা প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।