রাজশাহীতে বাড়ছে আত্মহত্যার মিছিল, নেপথ্যে হতাশা ও ঋণের বোঝা

- আপডেট সময় ০১:০১:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
রাজশাহী অঞ্চলে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। গত এপ্রিল মাসেই এই অঞ্চলে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। তবে, পুলিশের খাতায় নথিভুক্তির বাইরেও আরও অনেক ঘটনা থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রবণতা বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-যুবকদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দাম্পত্য কলহ, অভাব-অনটন, পরকীয়া এবং তরুণ প্রজন্মের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে না হওয়া। এছাড়াও, ঋণের বোঝা এবং আত্মবিশ্বাস বা আত্মবিশ্লেষণের অভাবও অনেককে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জহুরুল ইসলামের মর্মান্তিক ঘটনা তারই এক উদাহরণ। ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় এনজিও কর্মীদের অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি অফিসের মধ্যেই বিষপান করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নারীর ক্ষমতায়ন ও সম্পদে তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি, ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের প্রক্রিয়া সহজ করা এবং সকল হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
চিকিৎসকদের অভিমত হলো, মনোরোগ চিকিৎসাকে অবহেলা না করে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে হবে। পরিবার ও সমাজকে ভুক্তভোগীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে বেঁচে যান, তাদের নিয়মিত ফলোআপ চিকিৎসার মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। গত ১৪ই এপ্রিল, পয়লা বৈশাখের দিন, ষাটোর্ধ রুহুল আমিন নন্দনগাছি স্টেশনে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন, যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তার পরিবারের ভাষ্য, ঋণের ভার সইতে না পেরেই তিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এর আগে, ২০২৪ সালের জুনে পুঠিয়ার তরুণী রেমীর আত্মহত্যার ভিডিও দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
হাসপাতালের তথ্য ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চলতি বছরে রাজশাহীতে আত্মহত্যার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন রুয়েটের এক শিক্ষার্থী, পুলিশের এক এএসআই, রাবির এক ছাত্র, দুর্গাপুরের দুই গৃহবধূ এবং বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও আমেরিকা প্রবাসী ফারিহা নাজনীনসহ আরও অনেকে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস জানান, বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে চারজন আত্মহত্যা করছেন এবং এদের মধ্যে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীরাই বেশি। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা ও সাংসারিক ঝামেলা অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, যারা বেঁচে যান, তাদের ফলোআপ চিকিৎসা না করালে পুনরায় আত্মহত্যার ঝুঁকি থেকেই যায়।
আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে দেশে ৩১০ জন আত্মহত্যা করেছেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৬৫.৭ শতাংশ) আত্মহত্যা করেছে এবং আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৬১ শতাংশই নারী। নারী শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া এবং তাদের সহায়তা করা অত্যন্ত জরুরি।