অদম্য মানিক: পা দিয়ে লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায়

- আপডেট সময় ০১:২০:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
জন্মগতভাবে দুটি হাত না থেকেও মানিক রহমান নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আবারও এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘বি’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অর্জন করেছেন। রবিবার (১১ মে) প্রকাশিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে এই সাফল্যের খবর জানা যায়।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের বাসিন্দা মানিকের বাবা মিজানুর রহমান একজন ব্যবসায়ী এবং মা মরিয়ম বেগম একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। দুই ভাইয়ের মধ্যে মানিক বড়।
জন্ম থেকেই দুটি হাত না থাকলেও, প্রবল মানসিক শক্তি আর বাবা-মায়ের ভালোবাসায় মানিক পা দিয়েই পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। শুধু লেখাই নয়, তিনি পা দিয়েই কম্পিউটার ও স্মার্টফোন ব্যবহারে সমান পারদর্শী।
মানিক জানিয়েছেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেও অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপেক্ষমাণ তালিকায় তার নাম রয়েছে। তবে হাবিপ্রবির পরীক্ষায় সরাসরি মেধা তালিকায় স্থান পাওয়ায় তিনি বিশেষভাবে আনন্দিত।
কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করার প্রবল আগ্রহের কথা জানিয়ে মানিক বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়া এবং একজন সফল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সাফল্যের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
মানিক তার বাবা-মাকে প্রথম অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তার শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া সাহস ও সমর্থনকেও তিনি বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তিনি যেন শুধু নিজের নয়, তাদের স্বপ্নও পূরণ করতে পারেন, সেই চেষ্টাই তিনি করে যাবেন।
উল্লেখ্য, মানিক ২০২২ সালে ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এসএসসিতে তিনি তার উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। এর আগে পিইসি ও জেএসসিতেও তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
ছেলের এই অসাধারণ সাফল্যে গর্বিত মানিকের বাবা-মা। মা মরিয়ম বেগম মনে করেন, এই সাফল্যের মূলে রয়েছে আল্লাহর রহমত। তিনি বলেন, দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহ তার ছেলেকে বিশেষ দক্ষতা দিয়েছেন এবং তার অদম্য মনোবলই তাকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
বাবা মিজানুর রহমান জানান, তার ছেলের স্বপ্ন ছিল বুয়েটে পড়ার, কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সেখানে তাকে ‘অযোগ্য’ বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে হাবিপ্রবিতে সুযোগ পাওয়ায় তারা কৃতজ্ঞ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আল্লাহ যেন তার ছেলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করেন।