ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
বিচারককে হেনস্থা: 

আইনজীবীদের শাস্তি চাইল জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০২:২৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

জামিন নামঞ্জুর করার জেরে এক বিচারককে হেনস্থা করার অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের এই সংগঠন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অভিযুক্ত আইনজীবীদের সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।

সোমবার (১৯ মে) সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কঠোর দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত পাঁচ আইনজীবী—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম, আব্দুল খালেক মিলন, মো. জাবেদ, মো. ইলিয়াস ও মো. জহিরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তারা দেশের সকল জেলা আদালতের বিচারকদের সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-১ এর এজলাসে কতিপয় আইনজীবী বিচারক ও বিচারকার্যের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, এমনকি কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, এক পর্যায়ে বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়।

প্রকাশিত ভিডিও এবং প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার জিআর ১৫৬/২৫ মামলার জামিন শুনানির সময় বিচারক আইনানুগভাবে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম, আব্দুল খালেক মিলন, মো. জাবেদ, মো. ইলিয়াস ও মো. জহিরুল চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও সহিংস আচরণ করেন।

অভিযুক্ত আইনজীবী খোরশেদ আলমকে একটি নথি দেখিয়ে উচ্চস্বরে আঙুল নেড়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘ঘটনার তারিখ, ঘটনার সময়, ঘটনার স্থান সেইম- দুইটা মামলা (বাদী আলাদা); এটা হয় নাকি।’

অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে আব্দুল খালেক মিলন বিচারককে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন এবং মো. জাবেদ জামিনের জন্য পুনরায় শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

যখন বিচারক তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় স্পেশাল পুটআপ নিয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। অভিযোগ করা হয়েছে, তারা বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিবাদের দোসরসহ বিভিন্ন অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন এবং এজলাসের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলে দেন। তাদের এই আচরণের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হয় এবং বিচারক এজলাস ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এই ঘটনা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক এবং আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেছে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা এই ঘটনাকে সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেও অভিহিত করেছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

বিচারককে হেনস্থা: 

আইনজীবীদের শাস্তি চাইল জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

আপডেট সময় ০২:২৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

জামিন নামঞ্জুর করার জেরে এক বিচারককে হেনস্থা করার অভিযোগে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের এই সংগঠন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অভিযুক্ত আইনজীবীদের সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।

সোমবার (১৯ মে) সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কঠোর দাবি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত পাঁচ আইনজীবী—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের আহ্বায়ক ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম, আব্দুল খালেক মিলন, মো. জাবেদ, মো. ইলিয়াস ও মো. জহিরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে তারা দেশের সকল জেলা আদালতের বিচারকদের সাথে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত ১৭ মে দুপুরে ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নম্বর-১ এর এজলাসে কতিপয় আইনজীবী বিচারক ও বিচারকার্যের প্রতি প্রকাশ্য অবমাননা করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে চিৎকার-চেঁচামেচি, অশ্রাব্য গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য, এমনকি কোর্টরুমের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, এক পর্যায়ে বিচারককে বাধ্য হয়ে এজলাস ত্যাগ করতে হয়।

প্রকাশিত ভিডিও এবং প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার জিআর ১৫৬/২৫ মামলার জামিন শুনানির সময় বিচারক আইনানুগভাবে জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দিলে আসামিপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম, আব্দুল খালেক মিলন, মো. জাবেদ, মো. ইলিয়াস ও মো. জহিরুল চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও সহিংস আচরণ করেন।

অভিযুক্ত আইনজীবী খোরশেদ আলমকে একটি নথি দেখিয়ে উচ্চস্বরে আঙুল নেড়ে আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলতে শোনা যায়, ‘ঘটনার তারিখ, ঘটনার সময়, ঘটনার স্থান সেইম- দুইটা মামলা (বাদী আলাদা); এটা হয় নাকি।’

অন্যান্য আইনজীবীদের মধ্যে আব্দুল খালেক মিলন বিচারককে উদ্দেশ্য করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করেন এবং মো. জাবেদ জামিনের জন্য পুনরায় শুনানির তারিখ নির্ধারণের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

যখন বিচারক তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ায় স্পেশাল পুটআপ নিয়ে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন, তখন আইনজীবীরা আরও ক্ষিপ্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। অভিযোগ করা হয়েছে, তারা বিচারককে আওয়ামী লীগের দালাল, ফ্যাসিবাদের দোসরসহ বিভিন্ন অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন এবং এজলাসের কজলিস্ট ছুঁড়ে ফেলে দেন। তাদের এই আচরণের কারণে বিচারকার্য ব্যাহত হয় এবং বিচারক এজলাস ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এই ঘটনা দেশের বিচার বিভাগ, বিচারক এবং আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেছে জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। তারা এই ঘটনাকে সুস্পষ্ট ফৌজদারি অপরাধ হিসেবেও অভিহিত করেছে।