বৃহস্পতিবার ইশরাককে শপথ না পড়াতে রিটের আদেশ

- আপডেট সময় ০৩:৫৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
- / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে
ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে।
হাইকোর্ট এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টায় আদেশ দেবেন। নির্ধারিত দিনে আদেশের তারিখ পিছিয়ে এই দিন ঠিক করেন আদালত।
বুধবার (২১ মে) এ-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন । জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন রিটের পক্ষে শুনানি করেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট গাজী তৌহিদুল ইসলাম ও মো. মাকসুদ উল্লাহসহ অন্যান্য আইনজীবীরা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. মাহফুজুর রহমান মিলন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন।
ইশরাকের আইনজীবী ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, তাদের আশা রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ হতে পারে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে আইনি বিষয়ে যৌক্তিতকা তুলে ধরা হয়েছে এবং নিয়ম মেনে রায় দেননি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে মঙ্গলবার (২০) দুপুর ১টায় এ রিটের ওপর শুনানি শুরু হয়। চলে প্রায় দুটা পর্যন্ত। এরপর মুলতবি করা হয়। বিকেল চারটা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত ফের শুনানি চলে। তারপর আদেশের জন্য বুধবার সাড়ে ১২টার সময় ফের শুনানি ও আদেশের জন্য নির্ধারণ করা ছিল। সেটি পিছিয়ে বৃহস্পতিবার রিটের আদেশ জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি । তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে। এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস।
সেই নির্বাচনে সোয়া চার লাখ ভোট পেয়েছিলেন ফজলে নূর তাপস। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের তিন মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি গেজেট প্রকাশের দিন ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান । নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
তখন ওই দুই ব্যক্তির আইনজীবী বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে দ্রুত রায়টি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, ইসি এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করবে। চ্যালেঞ্জ করলো না। আবার খবরে দেখলাম, আইন উপদেষ্টা বলছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের যে মতামত চাওয়া হয়েছিল, সেজন্য অপেক্ষা না করে এই নোটিফিকেশন জারি করে দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এমন কোনো আদেশ দিতে পারেন না যে আদেশের কোনো কার্যকারিতা নেই। এখানে টার্ম শেষ হয়ে গেছে। অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়র পদশূন্য করে দেওয়া হয়েছে।
পরে সেই সঙ্গে রিটে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয় রিট আবেদনে। রিটে ২৭ মার্চের রায়, ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
এদিকে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন ব্লকেড কর্মসূচিতে নেমেছেন তার সমর্থকরা। গত কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে তারা কর্মসূচি পালন করে আসছেন।