ঢাকা ১২:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

চাল নিয়ে রসিকতা, মন্ত্রিত্ব গেল জাপানের কৃষিমন্ত্রীর!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৫:৩৬:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

জাপানের কৃষিমন্ত্রী চাল নিয়ে সামান্য মজার ছলে একটি মন্তব্য করায় তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে! এটি কেবল একটি মন্তব্য নয়, এর পেছনে রয়েছে জাপানের গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও চালের রাজনীতির সংবেদনশীলতা।

জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো একটি অনুষ্ঠানে কিছুটা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “আমি এত চাল উপহার পাই যে আমার কেনার দরকার হয় না।”

তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, সবাই তার এই কথাটি মজা হিসেবেই নেবে। কিন্তু ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো। জাপানে যখন জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশছোঁয়া, এবং চালের দাম গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, তখন কৃষিমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোনোভাবেই সহজভাবে নিতে পারেনি জাপানের সাধারণ মানুষ। তীব্র জনরোষের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

চাল জাপানের রাজনীতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, চাল সংকটের কারণে দেশটিতে বড় বড় রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এমনকি ১৯১৮ সালে চালের মূল্যবৃদ্ধি ঘিরে ব্যাপক দাঙ্গার পর তৎকালীন সরকারের পতন হয়েছিল। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য নিঃসন্দেহে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।

কৃষিমন্ত্রীর এই পদত্যাগের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারের ওপর আরও চাপ বাড়িয়েছে। এমনিতেই চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছিল। এখন মন্ত্রীর এই মন্তব্য সরকারকে আরও গভীর সংকটে ফেলেছে।

ইবারাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতিবিদ কুনিও নিশিকাওয়া চালের হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। তবে তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে চাহিদার ভুল হিসাব করাটাও এর অন্যতম প্রধান কারণ।

চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশ্লেষকেরা। করোনার পর জাপানে চালের দাম বেশ বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে মানুষ সস্তা খাবারের দিকে ঝুঁকছিল, ফলে কম দামি খাবার হিসেবে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া, বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধিও চালের চাহিদা বাড়ার একটি কারণ। সব মিলিয়ে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয়ও চাহিদার চেয়ে কম চাল উৎপাদনের কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, গরম আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি চালের গুণমানও খারাপ হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

চাল নিয়ে রসিকতা, মন্ত্রিত্ব গেল জাপানের কৃষিমন্ত্রীর!

আপডেট সময় ০৫:৩৬:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

জাপানের কৃষিমন্ত্রী চাল নিয়ে সামান্য মজার ছলে একটি মন্তব্য করায় তাকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে! এটি কেবল একটি মন্তব্য নয়, এর পেছনে রয়েছে জাপানের গভীর অর্থনৈতিক সংকট ও চালের রাজনীতির সংবেদনশীলতা।

জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো একটি অনুষ্ঠানে কিছুটা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “আমি এত চাল উপহার পাই যে আমার কেনার দরকার হয় না।”

তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, সবাই তার এই কথাটি মজা হিসেবেই নেবে। কিন্তু ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো। জাপানে যখন জীবনযাত্রার ব্যয় আকাশছোঁয়া, এবং চালের দাম গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, তখন কৃষিমন্ত্রীর এই মন্তব্য কোনোভাবেই সহজভাবে নিতে পারেনি জাপানের সাধারণ মানুষ। তীব্র জনরোষের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

চাল জাপানের রাজনীতিতে অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বিষয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, চাল সংকটের কারণে দেশটিতে বড় বড় রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে। এমনকি ১৯১৮ সালে চালের মূল্যবৃদ্ধি ঘিরে ব্যাপক দাঙ্গার পর তৎকালীন সরকারের পতন হয়েছিল। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য নিঃসন্দেহে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।

কৃষিমন্ত্রীর এই পদত্যাগের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারের ওপর আরও চাপ বাড়িয়েছে। এমনিতেই চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা কমছিল। এখন মন্ত্রীর এই মন্তব্য সরকারকে আরও গভীর সংকটে ফেলেছে।

ইবারাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতিবিদ কুনিও নিশিকাওয়া চালের হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। তবে তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে চাহিদার ভুল হিসাব করাটাও এর অন্যতম প্রধান কারণ।

চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে আরও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশ্লেষকেরা। করোনার পর জাপানে চালের দাম বেশ বেড়ে যায়। অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির কারণে মানুষ সস্তা খাবারের দিকে ঝুঁকছিল, ফলে কম দামি খাবার হিসেবে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া, বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধিও চালের চাহিদা বাড়ার একটি কারণ। সব মিলিয়ে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

জাপানের কৃষি মন্ত্রণালয়ও চাহিদার চেয়ে কম চাল উৎপাদনের কথা স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, গরম আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন যেমন কমেছে, তেমনি চালের গুণমানও খারাপ হয়েছে।