সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে, আর তারই মধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার একটি বিস্ফোরক মন্তব্য আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি বাংলাদেশ ভারতের ‘চিকেনস নেকে’ আক্রমণ করে, তাহলে ভারতও বাংলাদেশের ‘দুই চিকেনস নেকে’ আক্রমণ করবে!

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার (২১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশের প্রতি এই কড়া বার্তা দেন।

ভারতের কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘চিকেনস নেক’ বা শিলিগুড়ি করিডর নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আমাদের একটি চিকেনস নেক আছে। কিন্তু বাংলাদেশের দুটি চিকেনস নেক আছে। যদি বাংলাদেশ আমাদের চিকেন নেককে আক্রমণ করে, আমরা বাংলাদেশের দুটি চিকেন নেককেই আক্রমণ করব।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “মেঘালয়ের যে অংশ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত, তা ভারতের চিকেন নেকের চেয়েও সরু এবং সেটি একদম হাতের কাছেই অবস্থিত।”

এই বিজেপি নেতা ভারতকে আক্রমণ করার আগে বাংলাদেশকে ‘১৪ বার পুনর্জন্ম’ নেওয়া দরকার বলেও মনে করিয়ে দেন। এ সময় তিনি ভারতের সামরিক শক্তির কথা, বিশেষ করে সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুরের’ কথাও উল্লেখ করেন। এমনকি, তিনি বাংলাদেশকে ‘স্মল কান্ট্রি’ বা ‘ছোট দেশ’ বলে এর গুরুত্ব কমিয়ে দেখান।

হিমন্তের এই সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এল, যখন খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি পুরোনো বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবিত করতে যাচ্ছে। এই স্থানটি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

শিলিগুড়ি করিডর বলতে মূল ভূখণ্ডকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের সঙ্গে সংযোগকারী সরু, অরক্ষিত ভূখণ্ডকে বোঝায়। এই করিডরের প্রস্থ প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম।

এছাড়াও, কয়েক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফরের সময় ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে ‘ভূবেষ্টিত’ উল্লেখ করে এই অঞ্চলের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ হিসেবে বাংলাদেশকে আখ্যা দিয়েছিলেন। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মন্তব্য হয়তো সেই প্রেক্ষাপটেও এসেছে।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতে, বাংলাদেশেরও ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের মতো দুটি ‘চিকেনস নেক’ রয়েছে। তার মতে, একটি সরু করিডর বাংলাদেশের প্রধান ভূখণ্ডকে বৃহত্তম বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম থেকে বাংলাদেশের মিরসরাই উপজেলা পর্যন্ত এই স্থলপথের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার, যা চট্টগ্রামকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

দ্বিতীয় ‘চিকেনস নেক’টি তার মতে, মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম গারো পাহাড় থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে অবস্থিত, যার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার।