ঢাকা ১১:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০২:০০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ২৬৯ বার পড়া হয়েছে

কাশ্মিরের মারহামা গ্রামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে এবং তা সামরিক সংঘাতের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মহলের উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বানের মধ্যেই প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারত এখন পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের এই তৎপরতা মূলত আন্তর্জাতিক সমর্থন চাওয়া নয়, বরং পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেও ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস’ এবং ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় গত কয়েক রাত ধরেই ছোট অস্ত্রের গোলাগুলি হয়েছে। কেউ বলছেন গত তিন রাত, আবার কারও মতে গত তিন রাতের মধ্যে দু’রাতে গোলাগুলি হয়েছে।

অন্যদিকে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে এবং সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে ইতোমধ্যে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে ভারত পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসের কয়েকজন কর্মী ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানও এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বিশেষ করে কাশ্মির সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্থগিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে মুসলিমবিরোধী মনোভাবও বাড়ছে। কাশ্মিরের বাইরের শহরগুলোতে অধ্যয়নরত কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করেনি এবং হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার খুব কম প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। তবে পাকিস্তান সরকার এই হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তারা জানান, সাম্প্রতিক হামলার তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্রের কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়: হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, অথবা তারা মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রুত বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা তারা কম করছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: পাকিস্তানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত

আপডেট সময় ০২:০০:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মিরের মারহামা গ্রামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে এবং তা সামরিক সংঘাতের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মহলের উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বানের মধ্যেই প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারত এখন পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইতোমধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে।

প্রতিবেদনে চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতের এই তৎপরতা মূলত আন্তর্জাতিক সমর্থন চাওয়া নয়, বরং পাকিস্তানে সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। এর আগে গত বৃহস্পতিবার মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেও ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো ধ্বংস’ এবং ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় গত কয়েক রাত ধরেই ছোট অস্ত্রের গোলাগুলি হয়েছে। কেউ বলছেন গত তিন রাত, আবার কারও মতে গত তিন রাতের মধ্যে দু’রাতে গোলাগুলি হয়েছে।

অন্যদিকে, কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে এবং সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িতদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। সেখানে ইতোমধ্যে বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে ভারত পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একইসঙ্গে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসের কয়েকজন কর্মী ও ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পাকিস্তানও এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, বিশেষ করে কাশ্মির সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলওসি) যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্থগিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতে মুসলিমবিরোধী মনোভাবও বাড়ছে। কাশ্মিরের বাইরের শহরগুলোতে অধ্যয়নরত কাশ্মিরি শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং অনেকেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ঘোষণা করেনি এবং হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার খুব কম প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। তবে পাকিস্তান সরকার এই হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তারা জানান, সাম্প্রতিক হামলার তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্রের কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়: হয় ভারত আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, অথবা তারা মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রুত বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তবে ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা তারা কম করছে বলেই মনে করছেন অনেকে।