০১:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ নয়, দেশের নাম হোক ‘জনকল্যাণ রাষ্ট্র’, প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলনের

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৫:১০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
  • / ২১ বার পড়া হয়েছে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলছে, এখন দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ আছে, সেটা বদলে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ করা হোক। এর মানে হলো ‘বাংলাদেশের জনকল্যাণ রাষ্ট্র’। এছাড়াও দলটি আরও চারটি প্রধান প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো হলো – নিজেকে পরিশুদ্ধ করা বা ভালো মানুষ হওয়া, কাজের জন্য জবাবদিহি করা, শরিয়াহ আইন চালু করা এবং ভোটের হিসাবে আসন ভাগ করা (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন)।

বৃহস্পতিবার (১০ই এপ্রিল) দলটির নেতারা জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অফিসে গিয়ে তাদের মতামত জানান। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাদের কাছ থেকে প্রস্তাবগুলো নেন।

সেখানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ দলের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মোট ১৬৬টি প্রস্তাব দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন এর মধ্যে ১৩০টি প্রস্তাবের সাথে একমত হয়েছে, ২৫টিতে তাদের দ্বিমত আছে এবং ১১টিতে তারা কিছু বিষয়ে একমত আর কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে। এছাড়াও দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি প্রধান প্রস্তাব দিয়েছে।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন তাদের চারটি প্রধান প্রস্তাবের কথা বলেন। তিনি বলেন, যদি জাতীয়ভাবে সবাই ভালো না হয়, তাহলে মানুষ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হতে পারবে না। তাই তারা সব ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার কথা বলেছেন।

জবাবদিহিতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সবার কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে – আল্লাহর কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, জনগণের কাছে এবং যারা উপরে আছেন তাদের কাছে।

তিনি আরও বলেন, এখনকার আইনে দুর্নীতি, খারাপ শাসন, চুরি, ধর্ষণসহ খারাপ কাজ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই এগুলো বন্ধ করার জন্য তারা শরিয়াহ আইন চালু করার দাবি জানিয়েছেন। আশরাফ আলী আকন বলেন, শরিয়াহ আইনে সবার জন্য, সব ধর্মের মানুষের জন্য নিয়ম আছে। এটা খারাপদের দমন করতে এবং ভালোদের রক্ষা করতে খুব কার্যকর। বিএনপিও শরিয়াহ আইনের সাথে একমত এবং তারা শরিয়াহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলে তাদের জানিয়েছে।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তারা চান সব নির্বাচন এই নিয়মেই হোক। এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধ করা যাবে। ইসলামী আন্দোলন সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদেও সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে বলে জানান আশরাফ আলী আকন।

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। ‘জনকল্যাণ’ নামটা দেখলে মানুষের মনে যাতে কোনো খারাপ চিন্তা না আসে, তাই তারা ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নামটির প্রস্তাব করেছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই সবার অংশগ্রহণে দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতে সাহায্য করছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারবেন। তবে তিনি মনে করেন না যে তাদের সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে। কমিশন তাদের মতামতগুলো দেখবে এবং যেখানে দ্বিমত আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

আলী রীয়াজ আরও জানান, আগামী শনিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতিদিন অনেকগুলো দলের সাথে আলোচনা করবে। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য হলো আগামী মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রথম ধাপে সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা শেষ করা। এরপর তারা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করবেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ নয়, দেশের নাম হোক ‘জনকল্যাণ রাষ্ট্র’, প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলনের

আপডেট সময় ০৫:১০:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলছে, এখন দেশের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ আছে, সেটা বদলে ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ করা হোক। এর মানে হলো ‘বাংলাদেশের জনকল্যাণ রাষ্ট্র’। এছাড়াও দলটি আরও চারটি প্রধান প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলো হলো – নিজেকে পরিশুদ্ধ করা বা ভালো মানুষ হওয়া, কাজের জন্য জবাবদিহি করা, শরিয়াহ আইন চালু করা এবং ভোটের হিসাবে আসন ভাগ করা (সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন)।

বৃহস্পতিবার (১০ই এপ্রিল) দলটির নেতারা জাতীয় সংসদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অফিসে গিয়ে তাদের মতামত জানান। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ তাদের কাছ থেকে প্রস্তাবগুলো নেন।

সেখানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকনসহ দলের আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মোট ১৬৬টি প্রস্তাব দিয়েছে। ইসলামী আন্দোলন এর মধ্যে ১৩০টি প্রস্তাবের সাথে একমত হয়েছে, ২৫টিতে তাদের দ্বিমত আছে এবং ১১টিতে তারা কিছু বিষয়ে একমত আর কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে। এছাড়াও দলটি ৪১টি নতুন প্রস্তাব এবং ৪টি প্রধান প্রস্তাব দিয়েছে।

দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন তাদের চারটি প্রধান প্রস্তাবের কথা বলেন। তিনি বলেন, যদি জাতীয়ভাবে সবাই ভালো না হয়, তাহলে মানুষ সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক হতে পারবে না। তাই তারা সব ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার কথা বলেছেন।

জবাবদিহিতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সবার কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে – আল্লাহর কাছে, নিজের বিবেকের কাছে, জনগণের কাছে এবং যারা উপরে আছেন তাদের কাছে।

তিনি আরও বলেন, এখনকার আইনে দুর্নীতি, খারাপ শাসন, চুরি, ধর্ষণসহ খারাপ কাজ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই এগুলো বন্ধ করার জন্য তারা শরিয়াহ আইন চালু করার দাবি জানিয়েছেন। আশরাফ আলী আকন বলেন, শরিয়াহ আইনে সবার জন্য, সব ধর্মের মানুষের জন্য নিয়ম আছে। এটা খারাপদের দমন করতে এবং ভালোদের রক্ষা করতে খুব কার্যকর। বিএনপিও শরিয়াহ আইনের সাথে একমত এবং তারা শরিয়াহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলে তাদের জানিয়েছে।

সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তারা চান সব নির্বাচন এই নিয়মেই হোক। এর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে স্বৈরাচার প্রতিরোধ করা যাবে। ইসলামী আন্দোলন সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি পদেও সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচনের প্রস্তাব করেছে বলে জানান আশরাফ আলী আকন।

বাংলাদেশের নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। ‘জনকল্যাণ’ নামটা দেখলে মানুষের মনে যাতে কোনো খারাপ চিন্তা না আসে, তাই তারা ‘পিপলস ওয়েলফেয়ার স্টেট অব বাংলাদেশ’ নামটির প্রস্তাব করেছেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই সবার অংশগ্রহণে দেশ গড়ার কাজ শুরু হয়েছে এবং রাজনৈতিক দলগুলো এতে সাহায্য করছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারবেন। তবে তিনি মনে করেন না যে তাদের সব প্রস্তাবে সবাই একমত হবে। কমিশন তাদের মতামতগুলো দেখবে এবং যেখানে দ্বিমত আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবে।

আলী রীয়াজ আরও জানান, আগামী শনিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রতিদিন অনেকগুলো দলের সাথে আলোচনা করবে। তিনি বলেন, তাদের লক্ষ্য হলো আগামী মে মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রথম ধাপে সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা শেষ করা। এরপর তারা দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করবেন।