০৮:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

১৪ বছর বয়সী সূর্যবংশীর টর্নেডো সেঞ্চুরিতে উড়ে গেল গুজরাট

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০১:২৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

হারলেই প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে হবে রাজস্থান রয়্যালসকে। এমনি এক ম্যাচে আগে ব্যাট করে প্রতিপক্ষ গুজরাট টাইটানস চার উইকেট হারিয়ে করেছে ২০৯ রান। স্বাভাবিকভাবেই রাজস্থানের ওপর চাপটা ছিলো অনেক বেশি ছিল। নাটকের প্রথম পর্ব ছিল সেটা। কিন্তু নাটকের দ্বিতীয় পর্বটা যে একজন চৌদ্দ বছর বয়সী বালকের জন্য যে এতো জমজমাট হবে তা কে জানত!

বৈভব সূর্যবংশী নামের ১৪ বছর বয়সী এক ছেলের ব্যাটে স্রেফ আগুন ঝরল। সেই আগুনের উত্তাপে রাজস্থানও রয়্যালসও ডানা মেলে আকাশে উঠল। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন আইপিএলের ইতিহাসেই অন্যতম অবিশ্বাস্য এক ইনিংসের জন্ম হলো সূর্যবংশীর ব্যাটে।

১০১ রানের ইনিংস খেলতে বৈভব রাজবংশী ছক্কা মেরেছেন ১১টি ও চার হাঁকিয়েছেন ৭টি। বল খেলেছেন মাত্র ৩৮টি। বৈভব যখন টাইটানসের পেসার প্রসিদ্ধ কৃঞ্চার বলে আউট হন তখন জয়ের জন্য রাজস্থান রয়্যালসের প্রয়োজন ৫২ রান। হাতে ছিল ৪১ বল সঙ্গে ৯ উইকেট।

গুজরাট টাইটানসের দেওয়া রানের পাহাড় ডিঙিয়ে জয় তুলে আনার কঠিন কাজটাকে ততক্ষণে সহজ করে ফেলেছেন মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সী বৈভব।

পরে যশস্বী জয়সোয়াল ও রিয়ান পরাগের তৃতীয় উইকেট জুটি মাত্র ২০ বল খেলে ৪১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি রাজস্থানকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট ও ২৫ বল হাতে রেখে জয় পেয়েছে গুজরাট ।

বৈভবের আগুনে পুড়ল গুজরাট। দুইশর বেশি রান তাড়া করতে নেমে চার ওভারের বেশি বল হাতে রেখে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে রাজস্থান। ইনিংসের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলেন বৈভব। ইশান্ত শর্মার করা চতুর্থ ওভার প্রথম ঝড় তুলেন তিনি। ওই ওভারে ওঠা ২৮ রানের ২৬ রানই এসেছে বৈভবের ব্যাট থেকে। মাত্র ১৭ বলে ফিফটি তুলেছেন তিনি। যেটা আইপিএলের এ মৌসুমে দ্রুততমও। এরপর ইনিংসের ১০তম ওভারে গুজরাট পেসার করিম জানাতের ওপর টর্নেডো চালান সূর্যবংশী। একাই তুলেছেন ৩০ রান।

পরের ওভারেই আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন বৈভব। তাও রশিদ খানকে ছক্কা মেরে। ৩৫ বলে ১০০! তারচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি আছে শুধু টি টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা খ্যাত ক্রিস গেইলের। পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেন গেইল। তারপর চলে গেছে এক যুগ। তবু কেউ পারেনি গেইলের মতো বিস্ফোরক ইনিংসের কাছাকাছি যেতে। যা আজ পারলেন কিনা ১৪ বছর বয়সী রাজবংশী।

শুধু কি তা–ই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা বৈভব এখন আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।

এর আগে ২০০৯ সালে ১৯ বছর ২৫৩ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন মনীশ পাণ্ডে। যে রেকর্ডটি এখন বৈভবের। ছেলেদের টি–টোয়েন্টিতে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন তার। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ২০১৩ সালে ১৮ বছর ১১৮ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করা ভিজয় জোলের রেকর্ডটি এখন বৈভবের।

গতরাতের ম্যাচটি স্রেফ ভুলে যেতে চাইবেন গুজরাটের বোলাররা। বৈভব ও জয়সোয়াল ওপেনিং জুটিতেই ১৬৬ রান তুলেছেন। এর মধ্যে ৪০ বলে ৭০ রান করা জয়সোয়াল অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত। এদিন বৈভবের সামনে দুই ছক্কা ও ৯ চারে ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা জয়সোয়ালকেও কেমন ম্লান লেগেছে। কারণ বৈভবের ইনিংসের স্ট্রাইকরেট যে ২৬৫.৭৮! ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার যুবরাজ সিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইয়ান বিশপের সেই কথাটা স্মরণ করে তাই লিখেছেন, বৈভব সূর্যবংশী—রিমেম্বার দ্য নেম! পরাগ অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ৩২ রানে।

জয়পুরের মানসিংহ স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে গুজরাট। দলটির অধিনায়ক শুভমান গিল ৫০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে ২৬ বলে ৫০ রান করে অপরাজিত ছিলেন জস বাটলার। তবে বৈভবের ইনিংসের কাছে গত রাতে সবাই ছিল ম্লান। তার এমন ব্যাটিং দেখে প্রশংসা এসেছে প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও। গুজরাট অধিনায়ক শুবমান বলেছেন, দিনটা সূর্যবংশীর ছিল। আইপিএলে আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস।

রাজস্থান টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর জয়ের পথে ফিরল। ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আটে দলটি। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় গুজরাট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
গুজরাট টাইটানস : ২০ ওভারে ২০৯/৪ (গিল ৮৪, বাটলার ৫০*, সুদর্শন ৩৯, ওয়াশিংটন ১৩; থিকসানা ২/৩৫, সন্দ্বীপ ১/৩৩, আর্চার ১/৪৯)

রাজস্থান রয়্যালস : ১৫.৫ ওভারে ২১২/২ (বৈভব ১০১, জয়সোয়াল ৭০*, পরাগ ৩২*; রশিদ ১/২৪, প্রসিদ্ধ ১/৪৭)।

ফল: রাজস্থান ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : বৈভব সূর্যবংশী (রাজস্থান রয়্যালস)।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

১৪ বছর বয়সী সূর্যবংশীর টর্নেডো সেঞ্চুরিতে উড়ে গেল গুজরাট

আপডেট সময় ০১:২৬:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

হারলেই প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে পড়তে হবে রাজস্থান রয়্যালসকে। এমনি এক ম্যাচে আগে ব্যাট করে প্রতিপক্ষ গুজরাট টাইটানস চার উইকেট হারিয়ে করেছে ২০৯ রান। স্বাভাবিকভাবেই রাজস্থানের ওপর চাপটা ছিলো অনেক বেশি ছিল। নাটকের প্রথম পর্ব ছিল সেটা। কিন্তু নাটকের দ্বিতীয় পর্বটা যে একজন চৌদ্দ বছর বয়সী বালকের জন্য যে এতো জমজমাট হবে তা কে জানত!

বৈভব সূর্যবংশী নামের ১৪ বছর বয়সী এক ছেলের ব্যাটে স্রেফ আগুন ঝরল। সেই আগুনের উত্তাপে রাজস্থানও রয়্যালসও ডানা মেলে আকাশে উঠল। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন আইপিএলের ইতিহাসেই অন্যতম অবিশ্বাস্য এক ইনিংসের জন্ম হলো সূর্যবংশীর ব্যাটে।

১০১ রানের ইনিংস খেলতে বৈভব রাজবংশী ছক্কা মেরেছেন ১১টি ও চার হাঁকিয়েছেন ৭টি। বল খেলেছেন মাত্র ৩৮টি। বৈভব যখন টাইটানসের পেসার প্রসিদ্ধ কৃঞ্চার বলে আউট হন তখন জয়ের জন্য রাজস্থান রয়্যালসের প্রয়োজন ৫২ রান। হাতে ছিল ৪১ বল সঙ্গে ৯ উইকেট।

গুজরাট টাইটানসের দেওয়া রানের পাহাড় ডিঙিয়ে জয় তুলে আনার কঠিন কাজটাকে ততক্ষণে সহজ করে ফেলেছেন মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সী বৈভব।

পরে যশস্বী জয়সোয়াল ও রিয়ান পরাগের তৃতীয় উইকেট জুটি মাত্র ২০ বল খেলে ৪১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি রাজস্থানকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট ও ২৫ বল হাতে রেখে জয় পেয়েছে গুজরাট ।

বৈভবের আগুনে পুড়ল গুজরাট। দুইশর বেশি রান তাড়া করতে নেমে চার ওভারের বেশি বল হাতে রেখে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে রাজস্থান। ইনিংসের তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে রানের খাতা খোলেন বৈভব। ইশান্ত শর্মার করা চতুর্থ ওভার প্রথম ঝড় তুলেন তিনি। ওই ওভারে ওঠা ২৮ রানের ২৬ রানই এসেছে বৈভবের ব্যাট থেকে। মাত্র ১৭ বলে ফিফটি তুলেছেন তিনি। যেটা আইপিএলের এ মৌসুমে দ্রুততমও। এরপর ইনিংসের ১০তম ওভারে গুজরাট পেসার করিম জানাতের ওপর টর্নেডো চালান সূর্যবংশী। একাই তুলেছেন ৩০ রান।

পরের ওভারেই আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন বৈভব। তাও রশিদ খানকে ছক্কা মেরে। ৩৫ বলে ১০০! তারচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি আছে শুধু টি টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা খ্যাত ক্রিস গেইলের। পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে ২০১৩ সালে মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি করেন গেইল। তারপর চলে গেছে এক যুগ। তবু কেউ পারেনি গেইলের মতো বিস্ফোরক ইনিংসের কাছাকাছি যেতে। যা আজ পারলেন কিনা ১৪ বছর বয়সী রাজবংশী।

শুধু কি তা–ই এই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে নিজের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে নামা বৈভব এখন আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।

এর আগে ২০০৯ সালে ১৯ বছর ২৫৩ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করেছিলেন মনীশ পাণ্ডে। যে রেকর্ডটি এখন বৈভবের। ছেলেদের টি–টোয়েন্টিতে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন তার। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ২০১৩ সালে ১৮ বছর ১১৮ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করা ভিজয় জোলের রেকর্ডটি এখন বৈভবের।

গতরাতের ম্যাচটি স্রেফ ভুলে যেতে চাইবেন গুজরাটের বোলাররা। বৈভব ও জয়সোয়াল ওপেনিং জুটিতেই ১৬৬ রান তুলেছেন। এর মধ্যে ৪০ বলে ৭০ রান করা জয়সোয়াল অপরাজিত ছিলেন শেষ পর্যন্ত। এদিন বৈভবের সামনে দুই ছক্কা ও ৯ চারে ১৭৫ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা জয়সোয়ালকেও কেমন ম্লান লেগেছে। কারণ বৈভবের ইনিংসের স্ট্রাইকরেট যে ২৬৫.৭৮! ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ক্রিকেটার যুবরাজ সিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইয়ান বিশপের সেই কথাটা স্মরণ করে তাই লিখেছেন, বৈভব সূর্যবংশী—রিমেম্বার দ্য নেম! পরাগ অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ৩২ রানে।

জয়পুরের মানসিংহ স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে গুজরাট। দলটির অধিনায়ক শুভমান গিল ৫০ বলে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন। অন্যদিকে ২৬ বলে ৫০ রান করে অপরাজিত ছিলেন জস বাটলার। তবে বৈভবের ইনিংসের কাছে গত রাতে সবাই ছিল ম্লান। তার এমন ব্যাটিং দেখে প্রশংসা এসেছে প্রতিপক্ষ শিবির থেকেও। গুজরাট অধিনায়ক শুবমান বলেছেন, দিনটা সূর্যবংশীর ছিল। আইপিএলে আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস।

রাজস্থান টানা পাঁচ ম্যাচ হারের পর জয়ের পথে ফিরল। ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আটে দলটি। ৯ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় গুজরাট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
গুজরাট টাইটানস : ২০ ওভারে ২০৯/৪ (গিল ৮৪, বাটলার ৫০*, সুদর্শন ৩৯, ওয়াশিংটন ১৩; থিকসানা ২/৩৫, সন্দ্বীপ ১/৩৩, আর্চার ১/৪৯)

রাজস্থান রয়্যালস : ১৫.৫ ওভারে ২১২/২ (বৈভব ১০১, জয়সোয়াল ৭০*, পরাগ ৩২*; রশিদ ১/২৪, প্রসিদ্ধ ১/৪৭)।

ফল: রাজস্থান ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যাচসেরা : বৈভব সূর্যবংশী (রাজস্থান রয়্যালস)।