দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: জামায়াত আমির

- আপডেট সময় ০২:৩০:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
- / ৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেশের আবহাওয়া ও অবস্থার দিকে তাকিয়ে ফেব্রুয়ারি কিংবা এপ্রিলে নির্বাচন হওয়া উচিত। ঢাকার মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে শনিবার (৩ মে) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা দুটি সময়কে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় মনে করি। একটি রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে। তবে এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগু এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টি না করে তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পর্যন্ত যাওয়া যেতে পারে। এখানে আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং পারিপার্শ্বিকতার বিষয় আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ এবং মার্চ মাসের তিন ভাগের দুই ভাগ রোজা থাকবে। সে সময়ে নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, সংস্কার কার্যক্রম আক্ষরিকভাবে গতিশীল করা হলে এবং অংশীজনরা সেরকম সহযোগিতা করেন তাহলে সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব।
ফ্যাসিবাদীদের পতন হলো নাকি ফ্যাসিবাদের পতন হলো তা নিয়েও আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে। জাতি হিসেবে আমরা এখনও দুঃখের ইতিহাসের ইতি টানতে পারিনি।
জামায়াত আমির বলেন, এমন একটি সম্মেলন ২০১১ সালের এপ্রিল মাসের পর একত্রে বসে করার সুযোগ পাইনি। ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তাদের সঙ্গীরা দেশকে শাসন এবং শোসন করেছে। তারা এ দেশের বিরোধী দল-মত বিশেষ করে ইসলামপন্থিদের ওপর বিভিন্নভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে। কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা তারা চালিয়েছে।
প্রথমটি ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক সেনাকে হত্যা করে। যা সংঘটিত হয়েছিল তৎকালীন বিডিয়ারদের হেডকোয়ার্টার পিলখানায়। এরপরের ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যা করা হয়েছে। হেফাজতের আহ্বানে সমাবেশে রাতের বেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে মানুষগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। আরেকটি গণহত্যা ২০২৪ এর জুলাই মাসের অর্ধেক ও আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত। এতে শহীদ হয়েছে অনেকে, পঙ্গু হয়ে আছে অনেকজন।
জামায়াত আমির বলেন, দেশে কার্যত কোনো সরকার ছিল না ৫ আগস্টের পর। আমরা আমদের দলীয় সহকর্মীদের অনুরোধ করেছিলাম, সবাই যেন ধৈর্য ধরে, শান্ত থাকে। এর পাশাপাশি আমরা সাধারণ মানুষকেও আহ্বান জানিয়েছি। অন্যান্য দলও সেই আহ্বান জানিয়েছে। অন্যান্য দেশে এ সময়ে যা ঘটেছে তার তুলনায় তেমন কিছুই ঘটেনি। যা ঘটেছে তাও আমরা সমর্থন করি না। সেদিনই আমরা বলেছিলাম আমরা আইন হাতে তুলে নেব না। প্রতিকার চাইতে হবে আইনি প্রক্রিয়ায়।
আমাদের সহকর্মীরা এই ডাকে সাড়া দিয়েছে। কিছু জায়গায় এমন ঘটলেও সে জায়গায় আমরা চেহারার দিকে না দেখে ব্যবস্থা নিয়েছি। এরপর আমাদের শহীদ পরিবার ও আহতদের কাছে যাওয়া। শহীদদের পরিবারের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আহতদের জন্য অনেক বেশি করতে পারিনি। তবে তাদের জন্য যতটুকু পেরেছি তা করেছি, এর বাইরে সরকারকে চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছি। এরপর থেকে ফেনীতে যে বন্যা হয়েছে সেখানে আমরা শুরু থেকে অবস্থানের চেষ্টা করেছি। আমাদের চেষ্টায় যদি কিছুটা হলেও তাদের সান্ত্বনার কারণ হয় তার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
তিনি বলেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে কাজ করছে। তবে যেখানে জনগণের ভোগান্তি সেখানে সবার আগে সাড়া দেওয়া হয়তো সবসময় সম্ভব হয় না।
আওয়ামী লীগের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা যাতে বিঘ্ন না ঘটে এবং ভয়াবহতা বন্ধে জামায়াত ইসলাম কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ভলেন্টিয়ার ভাইয়েরা সে সময় যারা মাঠে ছিল তারা টানা ১৫ দিন অমুসলিমদের বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যে চেয়েছে তার ব্যবসা আমরা রক্ষা করেছি। এর পাশাপাশি মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা এগিয়ে এসেছেন। অন্যান্য কিছু সংগঠনের লোকদেরও আমরা দেখেছি।
এ সময় যারা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলেছি। এছাড়া সাড়ে ১৫ বছরের সময় ধরে যারা হত্যা, গণহত্যা গুম, খুন, ধর্ষণ করেছে, দেশের মানুষের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে তাদের যাতে আইনের আওতায় আনা হয় তার দাবি আমরা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে যাব।
তাদের প্রাপ্য শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। এই সরকার জন-আকাঙ্ক্ষার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছি৷ তবে এর মাঝে সরকারের কিছু উপদেষ্টা অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে। যা থেকে তাদের দূরে থাকার আহ্বান জানাই।