সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বাতিল হচ্ছে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা

- আপডেট সময় ০৫:১৪:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর! আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সঞ্চয়পত্রসহ অন্তত ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সেবায় আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যাচ্ছে।
এর ফলে, পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলেও আর আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) দাখিল করার প্রয়োজন হবে না। এই পদক্ষেপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে আনবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি ব্যাংকে দশ লাখ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) খুলতেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখানোর বাধ্যবাধকতা রহিত করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি এবং হিসাববিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ ও তা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। তবে, এসব ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) থাকা বাধ্যতামূলক থাকবে। অর্থাৎ, আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই টিআইএন-এর মালিক হতে হবে।
বর্তমানে দেশে প্রায় ৪৫টি সরকারি ও বেসরকারি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দাখিল করা বাধ্যতামূলক। মূলত করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে এই বাধ্যবাধকতার আওতা ক্রমশ বাড়ানো হয়েছিল। তবে, এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, এই পদক্ষেপের ফলে আয়কর আদায়ের পরিমাণে তেমন উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি না ঘটলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বহুলাংশে বেড়েছে।
২০২৩ সালের প্রণীত আয়কর আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে পিএসআর বাধ্যতামূলক, সেই সকল সেবায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি এটি যাচাই করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দশ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই কঠোর নিয়মের কারণে অনেক সাধারণ নাগরিক, যাদের প্রকৃতপক্ষে করযোগ্য আয় নেই, তারাও বাধ্য হয়ে শূন্য রিটার্ন জমা দিচ্ছেন, যা একদিকে যেমন সময় ও অর্থের অপচয়, তেমনি অন্যদিকে জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
নতুন প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র, মেয়াদি আমানত এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যপদ সহ অন্তত ১০টি সেবায় পিএসআর বাধ্যতামূলক না রাখার বিষয়ে বর্তমানে সক্রিয় আলোচনা চলছে। এই প্রস্তাবনা যদি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়, তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেই এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩৮টি সেবার উপর পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পরবর্তী অর্থবছরে আরও ছয়টি সেবা যুক্ত করে এই সংখ্যা ৪৪-এ উন্নীত হয়। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে বর্তমানে ৪৫টি সেবায় পিএসআর দাখিল করা বাধ্যতামূলক রয়েছে। আসন্ন বাজেটে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের সুসংবাদ।