ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

সীমান্তে ‘পুশ ইন’ নিয়ে উত্তপ্ত ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, অবিলম্বে বন্ধের কঠোর বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১০:১৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশভারত সীমান্তেপুশ ইনঅর্থাৎ জোরপূর্বক লোক ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংঘটিত এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকার নয় মে নয়াদিল্লির কাছে একটি কড়া কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে অবিলম্বে এইপুশ ইনবন্ধের জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত মে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ২০২ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে ৭৮ জনকে মে বিএসএফ একটি জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায়ও এইপুশ ইন’-এর বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়। সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সাংবাদিকদের এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

বিজিবি মহাপরিচালক স্পষ্ট করে বলেন, মে বিএসএফ মোট ২০২ জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়পুশ ইনকরেছে। তিনি আরও জানান, এই সীমান্ত এলাকাগুলোতে সাধারণত জনবসতি নেই, যে সুযোগটি নিয়ে বিএসএফ এই কাজ করেছে।

এই ২০২ জনের পরিচয় যাচাইবাছাই করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, পুলিশ বিশেষ শাখার মাধ্যমে তদন্ত করে যাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা গেছে, তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এদের মধ্যে অনেকেই গত থেকে ২৫ বছর আগে বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে আধার কার্ডসহ অন্যান্য ভারতীয় পরিচয়পত্র লাভ করেছিলেন। তবে, ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ তাদের সেই পরিচয়পত্র রেখে দিয়ে বাংলাদেশেপুশ ইনকরেছে।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ‘পুশ ইনকরা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, এই রোহিঙ্গারা পূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত ছিল এবং কোনোভাবে পালিয়ে ভারতে গিয়েছিল।

পুশ ইনকরা ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতে নিবন্ধিত শরণার্থীও পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভারতে তাদের নিবন্ধন পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

এইপুশ ইন’-এর প্রেক্ষাপটে, মে ভারতের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে, গত কয়েক দিনের এই পদক্ষেপ গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং এটি সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, পাশাপাশি জনমনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

কূটনৈতিক পত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পরেই প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে। এর অন্যথা ঘটলে দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাধা সৃষ্টি হবে।

একইভাবে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত। কোনো অবস্থাতেই ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশেপুশ ইনকরা গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাংলাদেশভারত সীমান্তে শান্তি স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই ধরনের পদক্ষেপ পরিহার করা উচিত।

নিউজটি শেয়ার করুন

সীমান্তে ‘পুশ ইন’ নিয়ে উত্তপ্ত ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, অবিলম্বে বন্ধের কঠোর বার্তা

আপডেট সময় ১০:১৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

বাংলাদেশভারত সীমান্তেপুশ ইনঅর্থাৎ জোরপূর্বক লোক ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সংঘটিত এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ সরকার নয় মে নয়াদিল্লির কাছে একটি কড়া কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে অবিলম্বে এইপুশ ইনবন্ধের জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত মে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক ২০২ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে জোরপূর্বক প্রবেশ করানো হয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, এদের মধ্যে ৭৮ জনকে মে বিএসএফ একটি জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায়ও এইপুশ ইন’-এর বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হয়। সভায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি সাংবাদিকদের এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

বিজিবি মহাপরিচালক স্পষ্ট করে বলেন, মে বিএসএফ মোট ২০২ জন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়পুশ ইনকরেছে। তিনি আরও জানান, এই সীমান্ত এলাকাগুলোতে সাধারণত জনবসতি নেই, যে সুযোগটি নিয়ে বিএসএফ এই কাজ করেছে।

এই ২০২ জনের পরিচয় যাচাইবাছাই করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, পুলিশ বিশেষ শাখার মাধ্যমে তদন্ত করে যাদেরকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা গেছে, তাদের নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এদের মধ্যে অনেকেই গত থেকে ২৫ বছর আগে বিভিন্ন সময়ে কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে আধার কার্ডসহ অন্যান্য ভারতীয় পরিচয়পত্র লাভ করেছিলেন। তবে, ভারতীয় পুলিশ বা বিএসএফ তাদের সেই পরিচয়পত্র রেখে দিয়ে বাংলাদেশেপুশ ইনকরেছে।

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ‘পুশ ইনকরা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন। বিজিবি মহাপরিচালক জানান, এই রোহিঙ্গারা পূর্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত ছিল এবং কোনোভাবে পালিয়ে ভারতে গিয়েছিল।

পুশ ইনকরা ব্যক্তিদের মধ্যে ভারতে নিবন্ধিত শরণার্থীও পাওয়া গেছে। এই বিষয়টি গভীর উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভারতে তাদের নিবন্ধন পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

এইপুশ ইন’-এর প্রেক্ষাপটে, মে ভারতের কাছে পাঠানো কূটনৈতিক পত্রে বাংলাদেশ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে, গত কয়েক দিনের এই পদক্ষেপ গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং এটি সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, পাশাপাশি জনমনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

কূটনৈতিক পত্রে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পরেই প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে। এর অন্যথা ঘটলে দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় বাধা সৃষ্টি হবে।

একইভাবে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠিয়ে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত। কোনো অবস্থাতেই ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশেপুশ ইনকরা গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাংলাদেশভারত সীমান্তে শান্তি স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই ধরনের পদক্ষেপ পরিহার করা উচিত।