ইতালি-বাংলাদেশ সমঝোতা: শ্রমবাজারে খুললো নতুন দিগন্ত

- আপডেট সময় ১২:৫১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি উভয় দেশের শ্রমবাজারের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নতুন এই চুক্তির আওতায় ইতালি বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সমঝোতা অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি ইউরোপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে সহায়ক হবে। এটি কেবল কর্মসংস্থানের সুযোগই সৃষ্টি করবে না, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকেও আরও শক্তিশালী করবে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে এটিই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক সমঝোতা স্মারক। বৈধ উপায়ে কর্মী অভিবাসনকে উৎসাহিত করাই এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য। যদিও ঠিক কত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ করা হবে এবং এর প্রক্রিয়া কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে আশা করা যাচ্ছে, কোটার পাশাপাশি দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে নিয়মিত কর্মী নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এই সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে ইতালির আগ্রহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ শ্রমিক রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই চুক্তির মাধ্যমে অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো বা তাদেরকে বৈধ করার একটি প্রক্রিয়া তৈরি হতে পারে। একইসাথে, দক্ষ কর্মীরা একটি সুস্পষ্ট ও সহজ পথে ইতালির শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারবেন।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বৈধ পথে ইতালিতে গিয়েছেন ৮৩ হাজারের কিছু বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক। তবে নতুন এই সমঝোতা স্মারক এই সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ, ইতালি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শাকিরুল ইসলাম মনে করেন, এই চুক্তি বাংলাদেশের অভিবাসন খাতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর সুফল পেতে হলে সরকারকে দক্ষ কর্মী তৈরি, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্যদিকে, ইতালির ভিসাপ্রত্যাশীরা এই চুক্তিকে একটি নতুন আশা হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওয়ার্ক পারমিট পেয়েও ভিসা প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকে হতাশ ছিলেন। তারা আশা করছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে বৈধ পথে কম খরচে ইতালি যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে এবং দালালদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা, এই চুক্তির ফলে ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ও ইতালির এই সমঝোতা স্মারক উভয় দেশের জন্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি সুষ্ঠু ও কার্যকর অভিবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে।