তারেক রহমানের দেশে ফিরতে বাধা কোথায়!

- আপডেট সময় ১২:৩৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ছাত্র-জনতার ব্যাপক অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আট মাস পেরিয়ে গেলেও, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান এখনও দেশে ফেরেননি।
এই দীর্ঘ অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি, গত ৬ই মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন চিকিৎসার জন্য লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন, তখন অনেকেই আশা করেছিলেন, পুত্র তারেক রহমানও তার সাথে ফিরবেন।
তবে, খালেদা জিয়ার সাথে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান দেশে ফিরলেও, তারেক রহমানের অনুপস্থিতি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে।
রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক কী কারণে তারেক রহমান এই মুহূর্তে দেশে ফিরছেন না? দীর্ঘ সময় ধরে তার অনুপস্থিতি জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
এটি কি কেবলই আইনি জটিলতা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করছে? তবে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা আইনি জটিলতাকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তারেক রহমান সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই দেশে ফিরবেন।
মামলা সংক্রান্ত যে আইনি বাধাগুলো রয়েছে, সেগুলো মিটে গেলেই তিনি মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করবেন। তারেক রহমানের আইনজীবীরাও আইনের শাসনের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখছেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের শাসন ছাড়া গণতন্ত্র চলতে পারে না। তারেক রহমান আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর নিষ্পত্তি চান।
তিনি শেখ হাসিনার সরকারের মতো কোনো আদেশের মাধ্যমে মামলা বাতিল করতে চান না, কারণ সেটি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
তিনি মনে করেন, সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জনগণের আস্থা ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধার সম্ভব। খুব শীঘ্রই তিনি দেশে ফিরবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদও আশা প্রকাশ করেছেন যে, তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে আসবেন।
দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জানান, তারেক রহমানের জন্য দল অপেক্ষা করছে এবং তিনি শীঘ্রই দেশে ফিরবেন।
তার বিরুদ্ধে দেশে এবং লন্ডনে বেশ কিছু মামলার আইনি প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করে তিনি দ্রুতই দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ফিরে আসবেন বলে তিনি মনে করেন।
তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিশেষ কোনো বাধা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপি চায় সকল আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে শেষ করে তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরে আসুন।
কোনো প্রকার আইনি ব্যত্যয় ঘটুক, এমনটা তারা প্রত্যাশা করেন না। তারা দ্রুত সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজ করছেন এবং আশা করছেন খুব শীঘ্রই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, গণতন্ত্রের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরা বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, তারেক রহমানও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরবেন এবং আইনি জটিলতা শেষ হলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেবেন।
তারেক রহমান বেশ কিছু মামলায় খালাস পেলেও, একটি মামলায় তার সাজা বহাল রয়েছে। মামলাটি হলো ‘ওয়ান-ইলেভেন’ খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা।
এই মামলায় ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আবেদনের প্রেক্ষিতে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে ডা. জুবাইদা রহমানের দণ্ডাদেশ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
তারেক রহমান ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এবং তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন।
দেশ ছাড়ার আগে তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার দেশত্যাগের আগে, ২০০৭ সাল থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ৮০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
বিএনপির নেতারা মনে করেন, তার অনুপস্থিতিতে যে সকল মামলায় তার সাজা হয়েছে, সেই রায় প্রদানকারী অনেক বিচারক পরবর্তীতে ‘পুরস্কারস্বরূপ’ পদোন্নতিও পেয়েছিলেন। গত ৫ই আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেক মামলা নিষ্পত্তি হলেও, এখনও কিছু মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।