ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
রাজস্ব প্রশাসনে বড় রদবদল, ঋণ পাওয়ার আশা জাগলো

বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্ত পূরণে এনবিআর বিলুপ্ত!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৯:৩৯:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বব্যাংকের ঋণের শেষ শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার বিলুপ্ত করলো ৫০ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর।

গভীর রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এনবিআরকে ভাগ করা হয়েছে দুটি নতুন বিভাগে— ‘রাজস্বনীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট সহায়তা ঋণ পেতে আর কোনো বাধা নেই বলে মনে করছে সরকার।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৯টি শর্তের মধ্যে আগেই ৮টি পূরণ করা হয়েছিল। বাকি ছিল শুধু এনবিআর সংস্কারের বিষয়টি। এখন ঋণ নিশ্চিত করতে ঢাকায় শুরু হয়েছে চূড়ান্ত আলোচনা। আজ বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বৈঠকে বসছেন বিশ্বব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনতে বাংলাদেশ সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দীর্ঘদিনের আলোচনা ও বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড – এনবিআর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিশ্চিত করা।

পাঁচ মাস আগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মোট নয়টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে আটটি শর্ত ইতিমধ্যেই পূরণ করেছে সরকার। সর্বশেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শর্তটি পূরণ হলো গত সোমবার গভীর রাতে, এনবিআর বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে।

আজ, বুধবার, রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই ঋণ সহায়তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। বৈঠকে অর্থ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনার ঠিক আগে শেষ শর্তটি পূরণ হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারে এখন বেশ আশাবাদী।

সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগে বিভক্ত করেছে। বিভাগ দুটি হলো – রাজস্বনীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে, রাজস্বনীতি বিভাগের শীর্ষ পদটি শুধুমাত্র কর এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত না রাখায়, এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তারা তিন দিনের কলমবিরতিও ঘোষণা করেছেন।

অন্যদিকে, দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এবং অর্থনীতিবিদরা এনবিআর বিলুপ্তির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে।

বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – অডিট অধ্যাদেশ জারি, প্রকিউরমেন্ট আইন সংশোধন করে ১০ শতাংশ কমবেশি নিয়ম বাতিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তার সমস্ত তথ্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, ভালো ও খারাপ ঋণ চিহ্নিত করা, করছাড় যৌক্তিকীকরণ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব আহরণ কৌশল প্রণয়ন এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও অবসায়নের জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ জারি করা।

এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুধু এনবিআর নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগও (আইআরডি) বিলুপ্ত করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজস্ব প্রশাসনে বড় রদবদল, ঋণ পাওয়ার আশা জাগলো

বিশ্বব্যাংকের ঋণের শর্ত পূরণে এনবিআর বিলুপ্ত!

আপডেট সময় ০৯:৩৯:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের ঋণের শেষ শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার বিলুপ্ত করলো ৫০ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর।

গভীর রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এনবিআরকে ভাগ করা হয়েছে দুটি নতুন বিভাগে— ‘রাজস্বনীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বাজেট সহায়তা ঋণ পেতে আর কোনো বাধা নেই বলে মনে করছে সরকার।

বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ৯টি শর্তের মধ্যে আগেই ৮টি পূরণ করা হয়েছিল। বাকি ছিল শুধু এনবিআর সংস্কারের বিষয়টি। এখন ঋণ নিশ্চিত করতে ঢাকায় শুরু হয়েছে চূড়ান্ত আলোচনা। আজ বুধবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বৈঠকে বসছেন বিশ্বব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি আনতে বাংলাদেশ সরকারের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দীর্ঘদিনের আলোচনা ও বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড – এনবিআর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিশ্চিত করা।

পাঁচ মাস আগে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে মোট নয়টি শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে আটটি শর্ত ইতিমধ্যেই পূরণ করেছে সরকার। সর্বশেষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শর্তটি পূরণ হলো গত সোমবার গভীর রাতে, এনবিআর বিলুপ্তির প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে।

আজ, বুধবার, রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই ঋণ সহায়তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। বৈঠকে অর্থ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনার ঠিক আগে শেষ শর্তটি পূরণ হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঋণ প্রাপ্তির ব্যাপারে এখন বেশ আশাবাদী।

সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগে বিভক্ত করেছে। বিভাগ দুটি হলো – রাজস্বনীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তবে, রাজস্বনীতি বিভাগের শীর্ষ পদটি শুধুমাত্র কর এবং শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত না রাখায়, এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তারা তিন দিনের কলমবিরতিও ঘোষণা করেছেন।

অন্যদিকে, দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এবং অর্থনীতিবিদরা এনবিআর বিলুপ্তির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলবে।

বিশ্বব্যাংকের অন্যান্য শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – অডিট অধ্যাদেশ জারি, প্রকিউরমেন্ট আইন সংশোধন করে ১০ শতাংশ কমবেশি নিয়ম বাতিল, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তার সমস্ত তথ্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা, ভালো ও খারাপ ঋণ চিহ্নিত করা, করছাড় যৌক্তিকীকরণ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব আহরণ কৌশল প্রণয়ন এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও অবসায়নের জন্য ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ জারি করা।

এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুধু এনবিআর নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগও (আইআরডি) বিলুপ্ত করা হয়েছে।